৫৪ বছরেও মমেক হাসপাতালে চালু হয়নি ‘ক্যাথল্যাব’

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৬২ সালে। এই ৫৪ বছরেও হাসপাতালটিতে একটি ‘ক্যাথল্যাব’ (এনজিওগ্রাম, হৃৎপিণ্ডের ব্লকে রিং পরানোর বিশেষায়িত বিভাগ) চালু করা হয়নি। এতে বৃহত্তর ময়মনসিংহের বহু হৃদরোগী এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মমেক হাসপাতালে ‘কার্ডিওলজি’ (হৃদরোগ) বিভাগ আছে। নেই ক্যাথল্যাব। অথচ হৃদরোগ বিভাগে ক্যাথল্যাব জরুরি একটি সেবার মাধ্যম বলে পরিচিত।
ক্যাথল্যাব না থাকায় ময়মনসিংহ ও আশপাশের এলাকার বিত্তশালীদের কেউ কেউ যাচ্ছেন ঢাকার নামী বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। কেউ বা যাচ্ছেন সিঙ্গাপুর ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে।
এ বিষয়ে কথা হয় মমেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এম সাইফুল বারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট মমেক হাসপাতালে প্রতিদিন তিন শতাধিক মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। তাঁদের মধ্যে অর্ধশতাধিক রোগী আসেন হৃদরোগ সমস্যা নিয়ে। তাঁদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক রোগীর তাৎক্ষণিক এনজিওগ্রাম করার দরকার হয়। কিন্তু এ ধরেনর জটিল রোগীদের জন্য হাসপাতালটিতে সেবা দেওয়ার মতো আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি নেই। ফলে এই রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মমেকের কার্ডিওলজি বিভাগে সাতটি ওয়ার্ডে ৯২ শয্যার মধ্যে পাঁচটি পেইং বেড রয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে হৃদরোগীর চাপ। বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
হৃদরোগীদের নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসা তদারকি দিতে হয়। তাই বাড়তি রোগী ভর্তি এবং অধিক সময় রোগীকে ওয়ার্ডে রাখার সুযোগ নেই। রোগী কিছুটা সুস্থ করে তোলার পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়। অথচ ক্যাথল্যাব চালু থাকলে এনজিওগ্রাম করে যাদের ছোট দু-একটা ব্লক আছে, তাদের স্টেনটিং (এনজিওপ্লাস্টি) করা যেত সহজে কম খরচে।
এ বিষয়ে কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান বলেন, দেশের কোনো বেসরকারি হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ যেকোনো সরকারি হাসপাতালে মাত্র তিন হাজার টাকায় তা সম্ভব। তিনি বলেন, বর্তমানে কার্ডিওলজি বিভাগে আদর্শ পরিবেশ তৈরির জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা চালু, উন্নত সেবা বৃদ্ধির জন্য পদ সৃষ্টি এবং জনবল বাড়ানো দরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসির উদ্দিন বলেন, হাসপাতালে একটি ক্যাথল্যাব স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর একটি আবেদন করা হয়। এ ছাড়া চলতি বছর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে একটি ক্যাথল্যাব স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে অত্যাবশ্যকীয় এই যন্ত্র এখনো পাওয়া যায়নি।
নাসির উদ্দিনের আশা, বৃহত্তর ময়মনসিংহের দুই কোটি মানুষের জন্য একমাত্র সরকারি আধুনিক হাসপাতালে ‘ক্যাথল্যাব’ দ্রুত সরবরাহ করতে সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থা নেবেন ।