বজ্রপাতের ঘটনায় সরকার উদ্বিগ্ন : ত্রাণমন্ত্রী

গত পাঁচ বছর ধরে প্রতি বছর গড়ে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে বজ্রপাতে। চলতি বছর মে মাসে কেবল চারদিনেই মারা যায় ৮১ জন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, ‘গত দুই বছরের বজ্রপাতের ঘটনায় সরকার উদ্বিগ্ন।’
আজ শনিবার ‘বজ্রপাতে করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী এ কথা বলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে এ কর্মশালার আয়োজন করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকারের একাধিক নির্বাচিত প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষকসহ বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা দিনব্যাপী এ কর্মশালায় অংশ নেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুগ্ম সচিব মো. মোহসীন বলেন, চলতি বছর জুন মাস পর্যন্ত বজ্রপাতে ৩২ জেলায় ১০৩ জন মারা যায়। এর মধ্যে নরসিংদী জেলায় মারা যায় সর্বোচ্চ সাতজন। ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ২৬৩ জন।
যুগ্ম সচিব মো. মোহসীন জানান, গত পাঁচ বছরে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় ২০১২ সালে। ওই বছর ৩০১ জন মানুষ বজ্রপাতের কারণে মারা যায়। ২০১১ সালে মারা যায় ১৭৯ জন, ২০১৩ সালে মারা যায় ২৮৫, ২০১৪ সালে মারা যায় ২১০ এবং ২০১৫ সালে মারা যায় ১৮৬ জন।
মো. মোহসীন জানান, বিশ্বে বছরে প্রায় দুই হাজার থেকে ২৪ হাজার মানুষ বজ্রপাতের কারণে মারা যায় এবং একই কারণে আহত হয় দুই লাখ ৪০ হাজার মানুষ। বজ্রপাতের কারণে বিশ্বে ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ১০০ কোটি ডলার।
মো. মোহসীন আরো বলেন, ‘বজ্রপাতের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় আশ্রয়কেন্দ্র করার কথা ভাবছি আমরা। কেননা এমনও এলাকা আছে যেখানে পাঁচ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত নিরাপদে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।’
অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘চলতি বছর ১১ মে থেকে ১৫ মে তারিখের মধ্যে বজ্রপাতে ৮১ জনের প্রাণহানির ঘটনার প্রেক্ষাপটে আমরা জরুরি বৈঠক করি।’ তিনি আরো বলেন, ‘২০১৫ এবং ২০১৬ সালের বজ্রপাতের ঘটনায় সরকার উদ্বিগ্ন।’
ত্রাণমন্ত্রী জানান, বজ্রপাতকে ‘দুর্যোগ’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের পরিবারকে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা এবং আহত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য সাত থেকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ১৮ লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতা হিসেবে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে। এ সময় সতর্ক থাকতে হবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বজ্রপাতের কারণ নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক এম আরশাদ মোমেন।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ্ কামাল, অতিরিক্ত সচিব সাজ্জাদ কবির, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য জামিলুর রেজা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাসটার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের পরিচালক মাহবুবা নাসরীন, উন্নয়ন সংস্থা জাইকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা নাওকি মাতসুমুরা।