বিনামূল্যে ৩৪ হাজার ৭১৫ জনের ছানি অপারেশন

দেখতে দেখতে ডা. মুকতাদির চক্ষু হাসপাতাল অতিক্রম করেছে ১২টি বছর। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই অন্ধকার ঘুচিয়ে পৃথিবীর নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখার সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যে ৫০০ জনকে বিনা খরচে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ২০০৪ সালে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে বিনামূল্যে ৩৪ হাজার ৭১৫ জন রোগীর চোখের ছানি অপারেশন ও লেন্স সংযোগ করা হয়েছে।
যুগপূর্তি উপলক্ষে গতকাল রোববার রাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম তিন দিনব্যাপী বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশন চক্ষুক্যাম্প উদ্বোধন করেছেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন অব মুজিবুর রহমান ফকির। তিন দিনব্যাপী এই চক্ষুক্যাম্পেই ৫০০ নারী-পুরুষের চোখে ছানি অপসারণ ও লেন্স সংযোজন করা হবে।
এবার ক্যাম্প পরিচালনায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. এ কে এম এ মুকতাদিরের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন,সিনিয়র কনসালন্ট্যাট ডা. খালিদ রেজা, জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মাশরেকা মতিনসহ ২৭ জন কর্মকর্তা।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. এ কে এম এ মুকতাদির তাঁর সহধর্মিণী গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. মাহমুদা খাতুনের সহযোগিতায় ২০০৪ সালের ১৬ জানুয়ারি গৌরীপুর উপজেলায় নিজ গ্রাম বোকাইনগর নয়াপাড়ায় পৈত্রিক পাঁচ একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ডা. মুকতাদির চক্ষু হাসপাতাল’। তিনি ১৯৭৫ সালে চিকিৎসক হওয়ার পর ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিবছরই সপ্তাহব্যাপী বিনামূল্যে চক্ষু অপারেশন ক্যাম্প করে নয় হাজার ৫৩৫ জন রোগীর চোখের ছানি অপারেশন করেন। ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ নিজ নামে ১০ শয্যার হাসপাতাল চালু করেন। পরবর্তী সময়ে নিজের ও সহধর্মিণীর পেনশনের টাকা ব্যয় করে হাসপাতালটি ৭০ শয্যায় উন্নীত করেন। চারতলা ভবনের দুটি অপারেশন থিয়েটার, ভিআইপি রোগীদের জন্য তিনটি এসি কেবিন, ছয়টি নন এসি কেবিন,পুরুষ-মহিলাদের পৃথক নামাজখানা, বিশ্রামাগার, স্টাফ ক্যান্টিন,রোগীর স্বজনদের জন্য আলাদা ক্যান্টিন, প্রতিটি ফ্লোরে দর্শণার্থীদের জন্য রঙিন টিভি ও মনিটরের মাধ্যমে রোগীর অপারেশন সরাসরি পর্যবেক্ষণের সুবিধা রয়েছে।
প্রতি শুক্র ও শনিবার সার্জিকেল টিমের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে ২৫ হাজার ৫০৫ জন রোগীকে চোখে ল্যান্স সংযোজনসহ ছানি অপারেশন, তিন হাজার ২৮৫ জনের নেত্রনালি অপারেশন, এক হাজার ১৮০ জনের চোখে বৃদ্ধি হওয়া মাংস অপারেশন, এক হাজার ৩৮২ জনের গ্লোকোমার অপারেশন, এক হাজার ৪৫০ শিশুর নেত্রনালি অপারশেন, ৪৪০ জনের চোখে কৃত্রিম চোখ সংযোজন, ৪৯০ জনের চোখের গুটি অপারেশন, ৪৫২ জনের চোখের টিউমার অপারেশন, ৪০ জনের টেরা (বাঁকা) চোখ অপারেশন ও ৪৯১ জনের চোখের ক্ষত অপসারণ সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়।
হাসপাতালে সার্বক্ষণিক তিনজন চক্ষুবিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োজিত আছেন। হাসপাতাল অভ্যন্তরেই স্বল্প খরচে ইসিজি, ব্লাডসুগার, রক্তচাপ, বায়োমেট্রি, এসপিটিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার ব্যবস্থাও রয়েছে। হাসপাতালকে আকর্ষণীয় করতে আঙিনায় নানা ফুল ও বাহারি গাছ রোপণ করে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। হাসপালের পাশে চিড়িয়াখানা স্থাপন করে অনেক হরিণ রাখা হয়েছে।
ডা. মুকতাদির চক্ষু হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. এ কে এম এ মুকতাদির জানান, ৩৯ বছর ধরে তিনি বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশনসহ অন্ধত্ব ঘোচানোর জন্য চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর অন্ধত্বের কবল থেকে ২৫ হাজার ৫০৫ জন চোখের আলো ফিরে পেয়েছেন। এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে ৩৪ হাজার ৭১৫ জন রোগীর চোখে সফল অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এরা সবাই হতদরিদ্র ও দুস্থ রোগী। এখানে চক্ষু শিবিরে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন বলে জানান তিনি।