নেত্রকোনায় শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে করণীয় শীর্ষক সেমিনার

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শিশুবান্ধব নীতিমালা বাস্তবায়নে করণীয় শীর্ষক দিনব্যাপী অ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয় মঙ্গলবার।
সেভ দ্য চিলড্রেন-এর সহায়তায় সোসাইটি ফর আন্ডার প্রিভিলেজ্ড ফ্যামিলিজ (সাফ)-এর আয়োজনে নেত্রকোনা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ড. আবদুর রহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ড. তরুণ কান্তি শিকদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক এস কে এম আনোয়ারুল হক, জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ফেরদৌসী বেগম।
সভায় স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে কর্মশালার উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন সাফ সিএসএসপি প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মনির উদ্দিন নিশাত। ইউনিয়ন পরিষদ ও কমিউনিটি ওয়াচগ্রুপের সমন্বয়ে প্রণীত ছয়টি শিশুবান্ধব নীতিমালা (শিশুকে খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ করে দেওয়া, শিশুর মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া, শিশুকে শ্রমে সম্পৃক্ত করা থেকে বিরত থাকা, অবশ্যই শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠানো, শিশুকে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়া থেকে বিরত থাকা, বাংলাদেশের বিবাহ আইন অমান্য করে বাল্যবিবাহ না দেওয়া) পরিবার ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে চর্চার বিষয়ে উপস্থিত সরকারি-বেসরকারি সকল কর্মকর্তার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি বলেন, সাফ-এর কর্ম-এলাকায় জরিপ মূল্যায়নের তথ্যগত চিত্র বিশ্লেষণ করলে সহজে অনুমেয় হয় যে, সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা পেলে সর্বস্তরে শিশুবান্ধব নীতিমালার চর্চা চালু করা সম্ভব। সাফ সিএসএসপি প্রকল্পের বর্তমান কার্যক্রমের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে উপস্থাপন করেন সাফ সিএসএসপি প্রকল্পের শিক্ষা বিশেষজ্ঞ মো. জাহিদুল ইসলাম। সাফ সিএসএসপি প্রকল্পে গৃহীত কর্মসূচির মাধ্যমে অর্জনগুলো সভায় তুলে ধরেন।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক এস কে এম আনোয়ারুল হক বলেন, ‘সাফ-এর উদ্যোগে যেসব কার্যক্রম মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে সেগুলোকে আমি স্বাগত জানাই। আমি সাফের কার্যক্রম মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করেছি যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।’ শিশুবান্ধব নীতিমালা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে স্কিম/ভাতাভোগীদের সচেতন করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
আনোয়ারুল হক আরো বলেন শিগরিরই সরকারি উদ্যোগে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সমাজসেবা থেকে শিশুকল্যাণ বোর্ড গঠন করা হবে। যার মাধ্যমে শিশুদের নিয়ে সরাসরি কাজ করা সম্ভব হবে।
জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ফেরদৌসী বেগম সভায় জানান, বাল্যবিবাহ নিয়ে অনেক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, তবু বিশ্বে বাল্যবিবাহের দিক দিয়ে আমরা তৃতীয় স্থানে আছি যা উদ্বেগজনক। বাল্যবিবাহ নিয়ে সরকার কর্তৃক প্রণীত আইন থাকা সত্ত্বেও এটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সুতরাং আমি মনে করি বাল্যবিবাহ বন্ধে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। আজকের সভায় উল্লেখিত শিশুবান্ধব নীতিমালা পরিবার পর্যায়ে চর্চা বাস্তবায়নে ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে ভিজিডি, মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ সরকারি সকল ভাতাসমূহে উপকারভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিশুবান্ধব নীতিমালা বিবেচনা করে তালিকা প্রণয়ন করলে এর চর্চা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে।
প্রধান অতিথির আলোচনায় নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ড. তরুণ কান্তি সিকদার বলেন, শিশুবান্ধব নীতিমালা পরিবার ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে চর্চার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। নেত্রকোনা জেলায় বিশেষ করে সদরে যেসব শিশু ব্যাটারিচালিত অটো রিকশা চালায় এবং চায়ের দোকানে কাজ করে সেসব শিশু শ্রমিকদের সংখ্যাগত তথ্য সংগ্রহ করা জরুরি। প্রয়োজনে জেলা পুলিশ সুপার ও সাফ-এর সহযোগিতায় সমন্বিত উদ্যোগে তথ্য সংগ্রহ করে শিশুশ্রমিকদের মূলধারার শিক্ষায় সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। সাফের উদ্যোগে পরিচালিত শিশুবান্ধব সব কর্মসূচিতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। অ্যাডভোকেসি সভা সঞ্চালনা করেন যৌথভাবে সাফের এরিয়া কো-অর্ডিনেটর দীপক সরকার ও রজত কান্তি দেবনাথ।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাজমুল হক, আমতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান, দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান পাঠান, নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মুখলেছুর রহমান, নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্যামলেন্দু পাল, কমিউনিটি ওয়াচ গ্রুপের সদস্য, শিশু ক্লাবের সদস্য ও সাফ প্রতিনিধিরা।