খাঁচায় মানুষ, বাইরে বাঘ

বনের ভেতর খাঁচায় বন্দি ২০ জন মানুষ। খাঁচার বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাঘ, ভালুক, সিংহসহ নানা বন্যপ্রাণী। একটু পরপর খাঁচার দিকে তাকিয়ে হুঙ্কার দিচ্ছে হিংস্র পশুরা। কয়েকটা বাঘ তো খাঁচার কাছেই দৌড়ে চলে আসছে। আর ভয়ে-শিহরণে কেঁপে উঠছেন খাঁচার ভেতরে থাকা মানুষগুলো।
কল্পকাহিনী মনে হচ্ছে? মোটেই না। তাহলে? এবার যদি জানাই এমন ঘটনা ঘটছে খোদ বাংলাদেশেই।
চমক আরো আছে। মানুষভর্তি এই খাঁচাসদৃশ যানটি আবার স্থির নয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যানটি দ্রুতগতিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে বনের ভেতরে। আর ওই যানের মধ্য থেকে বাইরে সবকিছু দেখা গেলেও এর বাইরে বের হওয়া কিংবা হাত-পা বের করার সুযোগ নেই। একমাত্র নির্দিষ্ট স্থানে গিয়েই বের হতে পারবেন খাঁচাভর্তি মানুষগুলো।
ঢাকার কাছেই গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে গেলে দেখা মিলবে এই অদ্ভুত যানের। খাঁচাসদৃশ এই যানে করে বন্যপ্রাণীদের কাছ থেকে দেখেন এই পার্কে আসা দর্শনার্থীরা।
এবারের ঈদুল আজহার ছুটিতে গাজীপুরের সাফারি পার্কে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। প্রায় চার হাজার একর জমির ওপরে অবস্থিত এই পার্কটিতে অনেকেই গেছেন পরিবার ও বন্ধু নিয়ে ঘুরতে।
সাফারি পার্কে যানে করে ঘুরে বন্যপশু দেখা ছাড়াও রয়েছে বিনোদনের নানা ব্যবস্থা। যেমন, দর্শনার্থীরা চাইলেই পাখির খাঁচার মধ্যে ঢুকতে পারবেন। সেখানে পাখিদের খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা সবই দেখা যায় খুব কাছ থেকে। আরো রয়েছে প্রজাপতির খাঁচা। সেখানে উড়ে-ঘুরে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার প্রজাপতি। সেই খাঁচায় ঢুকলে প্রজাপতিরা উড়ে এসে বসে দর্শনার্থীদের শরীরে।
আছে হাতির পিঠে চড়ার ব্যবস্থাও। একই সঙ্গে কুমির, হরিণ, বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ অনেক কিছুই দেখা যায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে।
তবে বেশির ভাগ দর্শনার্থীর আগ্রহ থাকে বাঘের রাজ্যে ঢোকার বিষয়ে। সেখানে যেতে হলে পার্কের নির্দিষ্ট টিকেট কাউন্টার থেকে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১০০ টাকা ও ছোটদের জন্য ৫০ টাকা দিয়ে টিকেট কাটতে হয়।
এরপর নির্দিষ্ট একটি প্রবেশপথ দিয়ে পার্কের ভেতরে ঢুকে লাইন দিয়ে উঠতে হয় বিশেষ একটি বাসে। আসনসংখ্যা অনুযায়ী যাত্রীরা বাসে ওঠার পরপরই বাসের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর এক এক করে বিভিন্ন জন্তুর বাসস্থানের সামনে দিয়ে চলতে শুরু করে বাস। কোথাও বনের মধ্যে ঘুরে বেড়া বাঘ, কোথাও ঘোরে জিরাফ, হরিণ, সিংহ, ভালুকসহ বিভিন্ন প্রাণী।
চলতে চলতে বাসটি আবার নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে দাঁড়ায়। সে সময় বন্যপ্রাণীগুলো একেবারে বাসের কাছাকাছি চলে আসে। দর্শনার্থীরা কাছ থেকে দেখতে পারেন এই প্রাণীদের।
সাফারি পার্কে ঘুরতে আসা মাহাবুব আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এর আগে দুই বার সাফারি পার্কের এই বাঘের এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। এবার ঘুরতে এসেছেন কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে।
সাফারি পার্কে ঘোরা অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘বাসের মধ্যে বসে বেড়ানোর সময় অনেক বাঘ গাড়ির একেবারে কাছে চলে আসে। এসে বাঘগুলো যখন বাসের দিকে তাকিয়ে থাকে, তখন মনে হয় যেন আমরা খাঁচায় বন্দি প্রাণী আর বাঘগুলো আমাদের দেখতে এসেছে।’
বাঘের রাজ্য থেকে ঘুরে বের হয়ে আসা রিতু আক্তার নামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানালেন, রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে চার বান্ধবীর সঙ্গে বেড়াতে এসেছেন তিনি। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো লেগেছে এই বাঘের রাজ্যে ঘুরে। যদিও প্রথমে বাঘ, সিংহকে কাছে আসতে দেখে কিছুটা ভয়ই পেয়েছিলেন। তবে পরে বেশ আনন্দ পেয়েছেন এই ভ্রমণে।
সাফারি পার্কের কর্মচারী শামসুল হক জানান, ঈদের ছুটির কারণে দর্শনার্থীদের চাপ বেশি। এ জন্য বাড়ানো হয়েছে বাসের সংখ্যাও। বেশিরভাগ সময়ই বাঘের এলাকায় ঘোরার বিষয়ে দর্শনার্থীদের আগ্রহ বেশি থাকে বলেও জানালেন তিনি।