শেখ ফরিদের গরুর দাম ১০ লাখ!

রাজধানীর গাবতলীর পশুর হাটে ঈদুল আজহা উপলক্ষে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু, ছাগল নিয়ে হাটে আসছেন গরু ব্যবসায়ী ও পশু পালনকারীরা।
গাবতলীর পশুর হাটে আজ শনিবার ঢুকতেই দেখা যায় সামিয়ানার নিচে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা চারটি গরুকে ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড়। গরু চারটিও বেশ আকর্ষণীয়। তিনটি কালো আর একটি লাল রঙের গরু। গরুগুলোর ঠিক পাশেই চেয়ারে বসে আছেন বিক্রেতা।
বড় গরুটির দাম কত? জিজ্ঞেস করতেই তিনি ওই গরুর দাম হাঁকলেন ১০ লাখ টাকা।
লোকজনের ভিড় একটু কমতেই কথা হয় ওই বিক্রেতা শেখ ফরিদের সঙ্গে। জানালেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। বহু বছর ধরেই কোরবানির বাজারে বিক্রির উদ্দেশে গরু পালন করাই তাঁর পেশা। নিজের বাড়িতে ছোট একটি খামারে তিনি দেশি ও বিদেশি গরু লালনপালন করেন। আর প্রতিবছর কোরবানি ঈদের আগে ওই গরু নিয়ে আসেন গাবতলীতে।
এনটিভি অনলাইনকে শেখ ফরিদ জানান, চারটি গরু নিয়ে গতকাল তিনি কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় এসেছেন। এই চারটি গরু তিনি দুই বছর আগে কিনেছিলেন। আর এবার ঈদে গরু চারটি বিক্রি করবেন তিনি।
ফরিদ আরো জানান, চারটি গরুর মধ্যে একটি বেশ বড় হয়েছে। বড় কালো গরুটির দাম ১০ লাখ টাকা চাইছেন তিনি। অপেক্ষাকৃত ছোট একটি লাল গরুর দাম চাইছেন সাত লাখ। বাকি দুটি কালো গরুর দাম ছয় লাখ টাকা করে মোট ১২ লাখ টাকা। আর সব মিলিয়ে চারটি গরুর জন্য তিনি প্রায় ২৯ লাখ টাকা দাম চাচ্ছেন।
শেখ ফরিদ এনটিভি অনলাইনকে আরো বলেন, সকাল থেকে অনেকেই গরু দেখতে এসেছে তবে শুধু দাম জিজ্ঞেস করেই চলে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত তাঁর কোনো একটি গরুরও নির্দিষ্ট দাম বলেননি কোনো ক্রেতা। অনেকে আবার দাম জিজ্ঞেস করে গরুর ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর পশুর হাট গাবতলীতে সারা দেশ থেকে পশু আসতে শুরু করেছে। দেশের অন্যতম বড় এই পশুর হাটকে সাজিয়ে গুছিয়ে তুলছে কর্তৃপক্ষও। প্রস্তুতির কাজ এরই মধ্যে অনেকটা শেষ। খোলা আকাশের নিচে সামিয়ানা টাঙিয়ে নিচে সারিবদ্ধভাবে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে গরু বেঁধে রাখার স্থান। হাটের ফটকও সাজানো হয়েছে সুন্দরভাবে।
কিন্তু হাটে আশানুরূপ পশু এলেও দেশের অন্যমত বৃহত্তম এই পশুর হাট এখনো ক্রেতাশূন্য। এক বিক্রেতা জানালেন, এই হাটে সাধারণত কোরবানির ঈদের তিনদিন আগে থেকে বেচাকেনা শুরু হয়। আর সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী ঈদের তিনদিন আগে থেকে রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে পশু কেনাবেচা শুরু হবে। তাই এখনো জমে ওঠেনি এই পশুর হাট।
তবে গাবতলীতে যেহেতু নিয়মিত হাট বসে, তাই এখন থেকেই পশু বেচাকেনা চলছে। আজ শনিবার গাবতলীর পশুর হাটে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে।
গরু বেঁধে নিয়ে যাওয়ার জন্য দড়ি ও গরুকে সাজানোর জন্য নানা রকমের কাগজের ফুলের দোকানও বসেছে গাবতলীর এই হাটে।
হাটের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে থেকে বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। এ ছাড়া র্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে বসানো হয়েছে দুটি অস্থায়ী কন্ট্রোলরুমও। গাবতলী পশুর হাটের সভাপতি মজিবুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে জানান, হাটের ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই যেন কোনো প্রতারণার শিকার না হন, সে কারণেই এসব নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
যশোর থেকে গাবতলীর হাটে গরু নিয়ে আসা জামাল উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী এনটিভি অনলাইনকে জানান, গতকাল শুক্রবার বিকেলে কয়েকজন মিলে ১৬টি গরু নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। রাত ৩টার দিকে হাটে পৌঁছেছেন। সকালে ট্রাক থেকে গরু নামিয়ে রেখে তাঁরা সকাল থেকে বিশ্রাম নিচ্ছেন এবং গরুগুলোকেও বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আজ তাঁরা গরু বিক্রি করবেন না, কারণ এখনো হাটে আশানুরূপ ক্রেতা দেখছেন না। সে কারণে গরুগুলোকে বিশ্রামে রেখে তরতাজা করে তুলছেন বিক্রেতারা।
ওই ব্যবসায়ী আরো জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে কোরবানির ঈদের সময় ঢাকায় গরু বিক্রি করতে আসেন তাঁরা। অধিকাংশ সময় কোরবানির আগের দু-একদিনে বেশি গরু বিক্রি হওয়ায় ঈদের আগমুহূর্ত পর্যন্ত তাঁদের হাটে অবস্থান করতে হবে। এ জন্য তাঁরা হাঁড়ি-পাতিল, চাল-ডাল ইত্যাদি নিয়ে এসেছেন।
গাবতলী হাটের ভেতরে হাসিলঘরের পাশে বেশ কয়েকটি দেশি জাতের ছাগল নিয়ে এক ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। জানালেন তাঁর নাম শরীফ হোসেন, বাড়ি ফরিদপুরে। নিজের বাড়িতেই তাঁর ছোট একটি ছাগলের খামার রয়েছে। প্রতিবছরই ঈদের সময় নিজের খামারের ছাগল নিয়ে ঢাকায় আসেন বিক্রির জন্য। এ বছর হাটে নয়টি ছাগল নিয়ে এসেছেন।
শরীফ হোসেন জানান, প্রতিবছর গাবতলীর পশুর হাটে বিক্রেতা আসার পর পশু রাখার জায়গা নির্ধারিত হয়। এ বছর ঈদের হাটে পশু রাখার জায়গা এখন পর্যন্ত নির্ধারণ হয়নি। এ কারণে ছাগল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। আর তাঁর ছেলে গিয়েছে হাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ছাগল রাখার ব্যবস্থা করতে।
গাবতলীর পশুর হাটের মূল ফটকের পাশেই বিভিন্ন ধরনের ঘাস, খড় বিক্রি করা হচ্ছে। ঘাস বিক্রি করতে আসা হামেদ আলী নামের এক ব্যক্তি এনটিভি অনলাইনকে জানান, এই হাটে সারা বছরই ঘাস বিক্রি করেন তিনি। তবে কোরবানির ঈদে হাটে গরু-ছাগল বেশি আসে, তাই তাঁর বিক্রিও বেশ ভালো হয়। এক আঁটি ঘাস পাঁচ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। তবে হাট পুরোদমে শুরু হলে এই ঘাসের চাহিদা বেড়ে যাবে। তখন ১০ টাকায় বিক্রি করবেন এক আঁটি ঘাস।
সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী ঈদের তিনদিন আগে থেকে রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে পশু কেনাবেচা শুরু হবে। তবে গাবতলীতে যেহেতু নিয়মিত হাট বসে, তাই এখন থেকেই পশু বেচাকেনা চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাবতলী পশুর হাট কার্যালয়ের এক কর্মচারী জানান, ঈদের হাটের নির্ধারিত দিনের আগে এখানে যে পশুগুলো কেনাবেচা হবে, তা হাটের বর্তমান ইজারাদারের আওতাভুক্ত।
গাবতলী পশুর হাটের সভাপতি মজিবুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, সিটি করপোরেশনের বেঁধে দেওয়া সময় ঈদের তিনদিন আগে কোরবানির পশুর হাট বসবে। হাটের কার্যক্রমকে সফল করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও হাট কর্তৃপক্ষ নিরলস কাজ করে চলছে।
এবারের ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ২২টি পশুর হাট বসার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৩টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় নয়টি।