পারব, আমাদের পারতেই হবে : সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন চান না আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচন হোক। অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদেরও চাওয়া, সবাই মিলে একটি ভালো নির্বাচন বাংলাদেশকে উপহার দিতে হবে। এজন্য সবার ভোটের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সিইসির দাবি, বিগত নির্বাচনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি ‘সিরিয়াসলি এফেক্টেড’ (গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত) হয়েছে। এই ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য এটাই হচ্ছে সুযোগ। সেজন্য সবাইকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আজ মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশনে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি আয়োজিত ফল উৎসবে এসব কথা জানান সিইসি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমি আপনাদের মাধ্যমে আমার সহকর্মী—এটা প্রশাসন হোক, পুলিশ হোক, কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হোক, যারা পোলিং-প্রিসাইডিং অফিসার যারা থাকবেন, তাদের কাছে আমার একটা আবেদন, সবাই মিলে ৯১ সালে একটা অত্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়েছি, ৯৬ সালে দিয়েছি, ২০০১ সালে দিয়েছি, এখন কেন পারব না? আমাদের পারতেই হবে। আমাদের এই যে প্রশাসনের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়েছে, এদের ভাবমূর্তি সিরিয়াসলি এফেক্টেড হয়েছে। পুলিশের ভাবমূর্তি সিরিয়াসলি এফেক্টেড হয়েছে।’
সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘১৫ বছর লড়াই করেছি ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু আমি মনে করি, উই আর জাস্ট ইন হাইওয়ে। অর্ধেক পথ গেছি, কিন্তু অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেদিন ভোটারেরা একদম নিশ্চিন্তে, নিজস্ব উদ্যোগে, বিনা বাধায়, নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে রেব হতে পারবে, বাড়ি ফিরে যেতে পারবে, সেদিনই আমরা বলব—ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভোটকে এখন আমি দায়িত্ব হিসেবে প্রচার করতে চাই। কারণ, প্রত্যেকটা ভোটারের দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিক হিসেবে এসে কেন্দ্রে ভোট দেওয়া।’
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘একটা জিনিস আপনারা অন্য রকমভাবে নিয়েন না। আমরা একসময় সরকারি চাকরি করেছি, আপনাদেরকে কোনো সাংবাদিককে যদি, আরএফডির কোনো সদস্যকে কেউ যদি সমালোচনা করে; অ্যাজ অ্যা কমিউনিটি আপনাদের একটু খারাপ লাগবে। আমরা যতই দোষ দিই না কেন, আমি যেহেতু সরকারি চাকরি করেছি, যখন মানুষ সমালোচনা করে যে রাতে ভোট করেছে এবং জালিয়াতি করেছে—এই রকম বলে, আমি মনে খুব কষ্ট পাই। এই অপবাদ সবাইকে নিতে হচ্ছে।’
সিইসি বলেন, ‘এই অপবাদটা কেন সবাইকে নিতে হচ্ছে? কাজেই আমি আপনাদের মাধ্যমে আমার সহকর্মী—এটা প্রশাসন হোক, পুলিশ হোক, কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হোক, যারা পোলিং-প্রিসাইডিং অফিসার যারা থাকবেন, তাদের কাছে আমার একটা আবেদন, সবাই মিলে ৯১ সালে একটা অত্যন্ত সুষ্ঠ নির্বাচন উপহার দিয়েছি, ৯৬ সালে দিয়েছি, ২০০১ দিয়েছি, এখন কেন পারব না। আমাদেরকে পারতেই হবে। আমাদের এই যে প্রশাসনের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়েছে, এদের ভাবমূর্তি সিরিয়াসলি এফেক্টেড হয়েছে। পুলিশের ভাবমূর্তি সিরিয়াসলি এফেক্টেড হয়েছে।’
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি সিরিয়াসলি এফেক্টেড হয়েছে। এই ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য এটাই হচ্ছে সুযোগ। আমি আমার কলিগরা, আমার সহকর্মীরা যারা এই ইলেকশনের সঙ্গে জড়িত থাকবেন, তাদের কাছে করজোরে আবেদন জানাই, আপনারা মানুষের শ্রদ্ধা অর্জনের চেষ্টা করুন। যে ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে, সেটা থেকে আপনারা উঠে আসুন। আমরা প্রমাণ করতে চাই—আমরা পারি, সরকারি কর্মচারীরা পারে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পারে, যদি তারা সত্যিকার অর্থে আন্তরিক হয়।’
সিইসি এ সময় গণমাধ্যমে ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন কমিশনের যত কাজকর্ম হচ্ছে, যত মেসেজ আমরা জাতিকে দিতে চাচ্ছি, আপনারাই তো মাধ্যম। এটা আপনাদের মাধ্যমেই দিচ্ছি। নইলে, আমাদের এক হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট নিয়ে লোকজন এঙ্গেজ করে মেসেজটা পৌঁছিয়ে দিতে হতো ১৮ কোটি মানুষের কাছে। আপনাদের মাধ্যমে একপ্রকার বিনা পয়সায় প্রচার আমরা করতে পারতেছি।’ তবে ভিউ বাড়ানোর জন্য নেতিবাচর হেডলাইন না করারও অনুরোধও করেন তিনি।
আজ এ ফল উৎসবে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘বাংলাদেশে সাধারণ থেকে শিক্ষিত-উচ্চশিক্ষিত সবার ভোটের প্রতি একটা অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। কেন অনিহা সৃষ্টি হয়েছে, তা আমার ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন নেই, দরকার নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যার যার অবস্থান থেকে সুষ্ঠু, সুন্দর, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক একটা নির্বাচন করার জন্য যার যার তরফ থেকে যে ভূমিকা, সেটা আমরা সঠিকভাবে পালন করব।’
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেন, ‘নির্বাচন শেষেও একটা ফল উৎসব আছে। এটা যাতে খুব সুন্দর হয়, আমি সেটাই আশা করব। আমাদের দায়-দায়িত্বটা যদি পালন করি, তাহলে একটা নির্বাচন খুব সুন্দর হবে এবং জাতি একটা সুন্দর নির্বাচন উপহার পাবে। আমরা সেজন্যই এখানে (ইসিতে) আছি।’
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমাদের সবারই উদ্দেশ্য হচ্ছে একটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য উৎসব নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা। সেখানে আমরা যত বেশি মিডিয়ার সম্পৃক্ততা পাব, ততই আমাদের জন্য ভালো হবে।’
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘সামনের দিনগুলোকে সুন্দর করার জন্য আমাদের এখন যেমন ভূমিকা আছে। সেরকম দায়বদ্ধতাও আছে। আমরা যে যার দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমাদের দায়িত্বটা পালন করি, যেন আমাদের সন্তান, সহকর্মী ভাই-বোনের রক্তের ওপর দাঁড়িয়েছি, তাদের রক্তের ঋণ যথাযথভাবে পরিশোধ করতে পারি।’
আরএফইডির সভাপতি কাজী জেবেলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ, বেগম তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।