‘এই বাসায় নাকি কাজের মাইয়ারে মাইরা ফালাইছে, তাই দেখতে আইছি’

রাজধানীর বনশ্রীর জি ব্লকে মঈনউদ্দিনের বাড়ি। ছয়তলা বাড়ি। দেয়ালে নীল আর সাদা রং। নিচে লম্বা কালো ফটক। বাড়ির সামনের দিকের জানালার গ্লাস সবগুলো ভাঙা। প্রধান ফটকের সামনে আগুনের পোড়া দাগ। সত্যিকার অর্থে ওই বাড়িটি এখন পোড়াবাড়ি। কেউ নেই সেখানে!
এ বাড়িতেই গতকাল শুক্রবার পাওয়া যায় গৃহকর্মী লাইলি বেগমের (২৫) লাশ। বাড়ির মালিক মঈনউদ্দিনের বাসায় কাজ করতেন তিনি। মঈনউদ্দিনের দাবি, গতকাল কাজ করতে এসে আত্মহত্যা করেন লাইলি।
মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ হয় স্থানীয় বাসিন্দারা। বিশেষ করে স্থানীয় লোকজন ওই বাড়ির সামনে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং মঈনউদ্দিনের বিচার দাবি করে। বিক্ষুব্ধ লোকজন ওই বাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। বাড়ির সামনে থাকা একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া পুলিশের সঙ্গেও ওই বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত কয়েক দফা ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ওই বাড়ির দোতলায় থাকেন মঈনউদ্দিন। তাঁকে ও বাড়ির দারোয়ান তোফাজ্জল হোসেন টিটুকে গতকালই আটক করা হয়। আজ ওই বাড়ি থেকে মঈনউদ্দিনের স্ত্রী শাহনাজকে আটক করা হয়।
ওই বাড়িটিতে এখন কেউ নেই। গতকাল দিনভর ওই বাড়িতে ইটপাটকেল ছোড়া হয়েছে। বাড়ির অন্য ফ্ল্যাটগুলোতে ভাড়াটিয়ারা থাকতেন।
অবস্থা দেখে গতকালই বনশ্রী এলাকার কল্যাণ সমিতির সদস্যরা নিজ দায়িত্বে ওই বাসার ভাড়াটিয়াদের নিরাপদে বের করে নিয়ে আসেন। এরপর থেকেই ওই বাসায় আজ শনিবার বিকেল পর্যন্ত আর কোনো ভাড়াটিয়া ফিরে আসেননি।
বিকেল ৪টার দিকে ওই বাসা থেকে এক ব্যক্তিকে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে বের হতে দেখা যায়। তিনি এনটিভি অনলাইনকে জানান, তাঁর নাম হাবিব। এই বাসার চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে তাঁর বোন ভাড়া থাকতেন। কিন্তু গতকালের ঘটনার পর তাঁরা দ্রুত ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে গেছেন। এ জন্য আজ তিনি ওই ফ্ল্যাট থেকে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে এসেছিলেন।
অপর দিকে মঈনউদ্দিনের বাসা পাহারা দিতে বাসার ঠিক সামনেই চেয়ার নিয়ে বসে রয়েছেন বেশ কিছু পুলিশ সদস্য। আর উৎসুক জনতা ওই বাসাটি দেখতে আসছেন কিন্তু বাসার ডান ও বাম পাশের রাস্তায় পুলিশ বসে পাহারা দিচ্ছে। কেউ ওই বাসার দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দিচ্ছে। তখন কিছু সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশের কিছুটা বাকবিতণ্ডাও করতে দেখা গেছে। পুলিশ সদস্যরা সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে সেখান থেকে সারানোর চেষ্টা করেছেন।
সাহেরা বেগম নামের এক নারী দাঁড়িয়েছিলেন। আর দেখছিলেন বাড়িটির অবস্থা। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এই বাসায় নাকি কাজের ম্যাইয়ারে মাইরা ফালাইছে হুনছি, তাই দেখতে আইছি। মানুষ এত খারাপ। আমরা গরিব বইলা কি আমাগোর জীবনের কোনো দাম নাই। এই ভাবে অত্যাচার করে মারব?’