ঘুম ভাঙলে কী হবে আতিক-মরিয়মের

মেরাদিয়া বস্তির একটি ছোট টিনের ঘর। ঘরে একটি খাট। ফ্যানটা ঘুরছে। শিশু আতিকুর আর মরিয়ম ঘুমাচ্ছে। পরনে কেবল হাফপ্যান্ট। বেশ ক্লান্ত। না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। মাঝ রাতেই হয়তো ক্ষুধায় জেগে উঠবে। খুঁজবে মাকে!
আতিকুর আর মরিয়ম জানে না তাদের মা লাইলি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। জানার বা বোঝার বয়সই কি হয়েছে ওদের? আতিকুরের বয়স তিন আর মরিয়মের বয়স পাঁচ!
বনশ্রীর এক বাসায় কাজ করতেন লাইলি বেগম (২৫)। আজ ওই বাসায় তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। বাসার গৃহকর্তা মঈনউদ্দিন দাবি করেন, বাসায় কাজ করতে এসে আত্মহত্যা করেছেন লাইলি। এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
মাঝরাতে ঘুম ভাঙলেও দেখা দেবেন না লাইলি। শিশুদের স্বজনরা জানালেন, মা না খাইয়ে দিলে খায় না আতিকুর আর মরিয়ম। আজ দুপুর থেকে না খাওয়া। মা লাইলি যে দুপুরের আগেই মারা গেছেন!
শিশু দুটির বাবার নাম নজরুল ইসলাম। কুড়িগ্রামে ভারতীয় সীমান্তে কাজ করতে গিয়ে আটক হন। এখন তিনি ভারতের এক কারাগারে বন্দি।
রাত ৯টার দিকে লাইলির ছোট টিনের ঘরে গিয়ে দেখা যায় ছোট শিশু দুটি ঘুমাচ্ছে। ঘরভর্তি অনেক মানুষ। সবার চোখে পানি। শিশুদের ফুপু, চাচিরা কেবলই কাঁদছিলেন। কাঁদছিলেন প্রতিবেশীরাও। তাঁরা সবাই ভাবছেন একটু পরেই তো আতিকুর আর মরিয়ম জেগে উঠবে। কী বলবেন তাদের, কীভাবে খাওয়াবেন তাদের?
লাইলির দুলাভাই নূর ইসলাম জানান, মা যে মারা গেছে তা জানে না শিশুরা। মা ছাড়া অন্য কারো হাতে তারা খায় না। সন্ধ্যার পর অনেকে চেষ্টা করেছে তাদের খাওয়ানোর। কিন্তু ওরা খায়নি। দিনভর বিক্ষোভ ও মিছিলে ওরা ছিল। কারো না কারো কোলে ওরাও ছিল পথে। এ কারণে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ঘুম ভাঙবে। খুঁজবে মাকে।
লাইলির ভাইয়ের ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন কাঁদছিলেন। তিনি বলেন, ‘ঘুম ভাঙলে এরা এদের মাকে খুঁজবে। কী বলব আমরা? মাকে ছাড়া তো ওরা খায়ও না।’