‘ইভান বলে, মেয়েটাকে বের করে দাও’

‘রাত ১২টার দিকে মেয়েটি রিকশায় করে আসে। আর ইভান গিয়ে মেয়েটিকে নিয়ে আসে। আমি বলছি, মামা (ইভান) এই মেয়ে কে? বলেছে, আমার ক্লাসফ্রেন্ড। এরপর বাসায় নিয়ে গেল মেয়েটাকে। হাসতে হাসতে উপরে বাসায় গেল দুজনে। তারপর রাত সাড়ে ৩টা-৪টার দিকে শুনতে পাই, উপরে চিল্লাচিল্লি হচ্ছে। এরপর আমি সাথে থাকা আরেক দারোয়ানকে ডাকলাম। এর মধ্যেই ইভান এসে বলছে মেয়েটাকে বের করে দাও। আমি বলছি, আমি এই মেয়ের গায়ে হাত দিতে পারব না। তুমি বের করে দাও। তখন সে নিজেই মেয়েটাকে বের করে দেয়।’
এভাবেই এনটিভি অনলাইনের কাছে রাজধানীতে জন্মদিনের পার্টির কথা বলে তরুণীকে বাসায় নিয়ে ধর্ষণের পর বের করে দেওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেছেন ওই বাসায় দায়িত্বরত নিরাপত্তাপ্রহরী মাসুদ মিয়া।
রাজধানীর বনানীর ২ নম্বর রোডের ৫/এ ঠিকানায় ‘ন্যাম ভিলেজ’ নামে বাসায় গত মঙ্গলবার রাতে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন এক তরুণী।
মাসুদ মিয়া আরো বলেন, ‘বের করে দেওয়ার সময় মেয়েটি বারবার বলছিলেন, আমি এত রাতে কই যাব? কিন্তু ইভান কিছু না শুনে জোর করে মেয়েটিকে বের করে দিয়ে উপরে চলে যায়। আর মেয়েটি রাস্তার উল্টাপাশের বাসার গেটের সামনে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়।’
নিরাপত্তাপ্রহরী মাসুদ আরো বলেন, ওই মেয়েটিকে বের করে দিয়ে ইভান তাঁর বাসায় চলে যায়। এ সময় ইভানের মা ও ছোট ভাই বাসায় ছিলেন, কিন্তু তাঁর বাবা ছিলেন না। পরে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ইভান বাইক নিয়ে বাইরে বের হয়। কিছুক্ষণ পরে দুই বন্ধুকে নিয়ে আবার বাসায় ফিরে আসে। এর কিছুক্ষণ পরে বাসায় আসেন ইভানের বাবাও।
এরপর সকাল ৭টার দিকে বনানী থানার পুলিশ বাসায় এসে ইভানের বাবা ও নিরাপত্তা প্রহরীকে ডেকে থানায় নিয়ে যায়। এরপর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং নাম-পরিচয় লিখে নেয় বলে জানিয়েছেন মাসুদ।
ওই তরুণী এর আগে বাসায় এসেছিলেন কি না- জানতে চাইলে মাসুদ মিয়া বলেন, এর আগে কোনোদিন তিনি ওই তরুণীকে দেখেননি।
বনানীর ওই বাসায় মা-বাবা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে থাকে ইভানের স্ত্রী ও দুই সন্তান। তবে ঘটনার রাতে বাসায় ইভানের স্ত্রী-সন্তানদের কেউই ছিল না। ঈদের পর থেকে তাঁর স্ত্রী পুরান ঢাকায় বাবার বাড়িতে আছেন বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তারক্ষী মাসুদ।
মাসুদ আরো জানান, বনানীর ‘ন্যাম ভিলেজ’-এর দোতলার একটি ফ্ল্যাটে মাসিক ৪৫ হাজার টাকায় ভাড়ায় থাকে ইভানের পরিবার। যদিও ওই বাসার সঙ্গেই ‘নাজনীন ভিলা’ নামে তাঁদের একটি টিনশেড বাসা রয়েছে। যেটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আবদুল মতিন জানান, ধর্ষণের অভিযোগে গতকাল বুধবার দুপুরে বনানী থানায় এক তরুণী মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলায় বৃহস্পতিবার রাতে ইভানকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ মামলার তদন্তকাজ চলছে বলেও জানান আবদুল মতিন।
এর আগে বনানীর অভিজাত হোটেল রেইনট্রিতে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনে গত ৬ মে মামলা করেছিলেন এক ছাত্রী। এ ঘটনা সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। পুলিশ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রাজধানীর স্বনামধন্য আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তাঁর বন্ধু নাঈম আশরাফকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা এখনো কারাগারে আছেন।
এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রাজধানীর অভিজাত এলাকায় আরেকটি ধর্ষণের অভিযোগ পেল পুলিশ।
আবদুল মতিন আরো জানান, মামলার এজাহারে ওই তরুণী উল্লেখ করেছেন, ১১ মাস আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ইভানের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। এর সূত্র ধরেই একসঙ্গে ঘোরাঘুরি করতেন তাঁরা। সর্বশেষ চার মাস আগে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
তরুণী আরো উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন রাত ৯টায় ইভান ফোন করে ওই তরুণীকে জন্মদিনের কথা বলে তাঁর বাসায় যেতে বলেন। জানান ওই দিন তাঁর মায়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন।
কিন্তু ওই তরুণী বাসায় গিয়ে আর কাউকে দেখেননি। মায়ের কথা জানতে চাইলে ইভান জানান, তাঁর বাবা-মা অসুস্থ। তাই ঘুমিয়ে আছেন। জোরে কথা বলা যাবে না।
এজাহারে ওই তরুণী আরো উল্লেখ করেন, ‘বাসায় জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কোনো আলামত দেখি না। আমি ভয় পাই এবং বাসায় আসতে চাই। কিন্তু সে বাসায় আসতে দেয় না। সে আমাকে রাতে খাবার খাওয়ায় এবং জোর করে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ায়।’
রাত দেড়টায় ইভান তাঁকে ধর্ষণ করেন বলে তরুণী এজাহারে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, ‘এরপর হুঁশ ফিরে পেয়ে আমি চিৎকার করতে থাকলে ইভান রাত সাড়ে ৩টায় আমার ব্যাগ রেখে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।’
এজাহারে তরুণী জানান, ইভান এর আগেও তাঁকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করেছেন। ভয় দেখিয়েছেন, মুখ খুললে তাঁর কাছে থাকা ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন।