বঙ্গবন্ধু পরিবারের স্মৃতি সংরক্ষণে জমি দান

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের প্রতি সম্মান দেখানো ও স্মৃতি সংরক্ষণে ‘শেখ রাসেল স্মৃতি সংঘের’ নামে জমি দিয়েছেন এক নারী। একই সঙ্গে তিনি নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাট-বাজারের জন্য জমি দিয়েছেন।
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার ভাঙাবাড়ি গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী মোসাম্মদ রেজিয়া খাতুন ওরফে সামেলা খাতুন এসব জমি দান করেন। সংশ্লিষ্ট বরংগাইল সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে পৃথক দুটি দানপত্র দলিলে গত সোমবার এই জমি রেজিস্ট্রি করা হয়।
জাফরগঞ্জ হাট-বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী জাফরগঞ্জ হাট-বাজার গত দুই দশকে যমুনা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। তাই ব্যবসায়ীরা সরকারি সড়কের দুই পাশে ব্যক্তিমালিকানা জমিতে দোকানঘর তুলে ব্যবসা করে আসছেন। সরকারি সড়কসংলগ্ন এসব দোকানঘর ও বাইরের খোলা জায়গায় প্রতিদিন বসছে জাফরগঞ্জ বাজার, সপ্তাহে দুদিন বসে হাট। নিজস্ব ও স্থায়ী জমি না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী।
স্থানীয় তেওতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল করিম শেখ, জাকির হোসেন খান তপন, নুরুল ইসলাম সিদ্দিকী, মো. আবুল কাশেম মোল্লা, মো. ছানা মিয়া, মো. সফি উদ্দিন, শ্রী আনন্দ চন্দ্র ঘোষ, শ্রী মোহন চন্দ্র ঘোষ, সাবেক মেম্বার আবদুর রশিদ, মো. জাহাঙ্গীর আলম, তেওতা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সংরক্ষিত আসনের সদস্য রওশন আরা ও কামরুল ইসলামসহ ব্যবসায়ীরা জাফরগঞ্জ-উথলি সড়কে নিরাপদ ও বিপুল জনসমাগমের উপযোগী একটি জমি নির্বাচন করেন। তাঁরা ওই জমির মালিক রেজিয়া খাতুনের কাছে গিয়ে হাটবাজারের জন্য জমি বিক্রি করার অনুরোধ করেন। রেজিয়া খাতুন তাদের জাফরগঞ্জ হাট-বাজারের নামে আট শতাংশ জমি দান করার কথা জানান। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি সম্মান দেখানো ও স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য বাজারের ভেতর শেখ রাসেল স্মৃতি সংঘের নামে দুই শতাংশ জমি দান করার ঘোষণা দেন।
জমি দান করার কারণ জানতে চাইলে রেজিয়া খাতুন বলেন, তাঁদের পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগ করেন। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি ভালোবাসা এবং বাজারের ব্যবসায়ীদের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে তিনি জমি দান করেছেন।
স্থানীয় নুরুল হুদা ও হোটেল ব্যবসায়ী আজগর আলী জানান, এতদিন নিজস্ব ও নির্দিষ্ট জমি না থাকায় জাফরগঞ্জ হাটবাজার নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। ইজারাদারের ব্যক্তি স্বার্থে হাট-বাজার যেখানে-সেখানে বসানোর চেষ্টা করা হতো। এখন হাটবাজারের নামে নিজস্ব জমি হওয়ায় তা আর সম্ভব হবে না। ব্যবসায়ীরা নিজেদের সুবিধামতো এই হাট-বাজারের জমিসংলগ্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি কিনে দোকানঘর তুলে স্থায়ীভাবে ব্যবসা করতে পারবেন।
তেওতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল করিম শেখ ও ব্যবসায়ী জাকির হোসেন খান তপন জানান, শেখ রাসেল স্মৃতি সংঘ ও জাফরগঞ্জ হাট-বাজারের নামে জমি রেজিস্ট্রি করার পর পরই বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে অবগত করা হয়েছে। শেখ রাসেল স্মৃতি সংঘ একটি কমিটির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও স্মৃতি সংরক্ষণে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত করবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের জন্য বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের অবদান তুলে ধরা হবে।
নিজস্ব জায়গায় জাফরগঞ্জ হাটবাজার বসানো ও উন্নয়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে যাবতীয় দলিল ও কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তাঁরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. নাজমুছ সাদাত সেলিম বলেন, এলাকাবাসীর দাবির বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখা হচ্ছে। হাট-বাজার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।