মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন রায়হান কবির

লকডাউনের মধ্যে প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেওয়া বাংলাদেশি নাগরিক রায়হান কবির (২৫) মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন। মালয়েশিয়ায় ২৭ দিন পুলিশের হেফাজতে থাকার পর আজ শনিবার ভোরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার শাহি মসজিদ এলাকায় নিজ বাসায় ফেরেন তিনি।
এর আগে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান রায়হান। পরিবারের সদস্যরা বিমানবন্দর থেকে রায়হানকে নিয়ে প্রাইভেটকারে করে বাসায় ফেরেন।
বাড়িতে ফেরার পর রায়হান এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় পুলিশের রিমান্ডে ২৭ দিন একই জামাকাপড়ে কেটেছে তাঁর। হাতকড়া লাগিয়েই পুলিশ তাঁকে মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন অতিক্রম করায়। এ সময় এক বাঙালি তাঁকে একটি শার্ট এনে দিলে গায়ের ময়লা জামাটি পরিবর্তন করে নেন তিনি। মালয়েশিয়ায় পুলিশ তাঁর সঙ্গে ভালো আচরণ করলেও দিনগুলো কেটেছে মানসিক চাপের মধ্যে। তবে তাঁকে যে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, বিমানবন্দরে আসার আগ পর্যন্ত জানতে পারেননি রায়হান। বিমানের টিকেটও পুলিশ কেটে দিয়েছে।
রায়হান আরো জানান, আলজাজিরার সাক্ষাৎকারে মালয়েশিয়া সরকারের বিরুদ্ধে তিনি কিছুই বলেননি। শুধু প্রবাসীদের দুঃখ, কষ্ট ও সমস্যার কথা তুলে ধরেছিলেন। পুলিশ একটি ভুল তথ্যের ভিত্তিতে তাঁকে আটক করেছিল। ফলে চার্জ গঠন করতে পারেনি।
এদিকে, দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সহায়তা করায় পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন রায়হান। এ ছাড়া কয়েক দিন পর সংবাদ সম্মেলন করে মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের বাস্তব জীবন এবং নিজের রিমান্ডের বিষয়ে কথা বলার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তিনি।
এর আগে গত বুধবার রায়হানের আইনজীবী সুমিথা শান্তিনি কিশনা বলেন, রায়হানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হবে না বলে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। গত ৮ জুলাই রায়হানের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করা হয়। পরে গত ২৪ জুলাই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ৩ জুলাই আলজাজিরায় প্রচারিত ‘১০১ ইস্ট’ অনুষ্ঠানে ‘লকড আপ ইন মালয়েশিয়াস লকডাউন’ শিরোনামে ২৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। এতে করোনাভাইরাস মহামারিতে মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে সরকারের আচরণ নিয়ে কথা বলেছিলেন রায়হান কবির।
আলজাজিরার ওই প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, মহামারির সময়ে মালয়েশিয়া সরকার মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডারের (এমসিও) মাধ্যমে অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়ার নিপীড়নের ছবিটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও গভীর উদ্বেগের।
সংবাদমাধ্যমটির ইউটিউব চ্যানেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে সমালোচনা শুরু হয়। দেশটির সরকার এমন অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে। গত ২৪ জুলাই সন্ধ্যায় রায়হানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৫ জুলাই তাঁকে ১৪ দিনের এবং পরে আবার নতুন করে ১৩ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।