ভৈরবে দুজন নিহতের মামলায় আসামি আড়াইশ, পুরুষশূন্য গ্রামের বাড়িঘর ভাঙচুর

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দুপক্ষের সংঘর্ষে দুজন নিহতের ঘটনায় করা মামলায় আড়াইশ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে গ্রেপ্তার এড়াতে পুরুষশূন্য দুই গ্রামে মধ্যযুগীয় কায়দায় বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে প্রতিপক্ষ শেখবাড়ী ও তাদের সমর্থিত লোকজন। এতে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্টসহ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে কয়েকশ পরিবার।
গত ১৭ এপ্রিল ভৈরবের আগানগর ইউনিয়নের লুন্দিয়া গ্রামের শেখবাড়ী আর শিকদার বাড়ীর লোকজনের মধ্যে ধান মাড়াই করাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে শেখবাড়ীর মকবুল শেখ নামে একজন নিহতসহ উভয় পক্ষের ১৫ থেকে ২০ জন আহত হয়। এ খবর খলাপাড়া গ্রামে পৌঁছালে বংশীয় সূত্রে খলাপাড়ার শেখবাড়ীর লোকজন স্থানীয় পাগলাবাড়ীতে হামলায় চলায়। এ ঘটনায় ফের শেখবাড়ীর পাভেল শেখ নামের অপর একজন নিহত হন। আহত হয় উভয় বংশের অর্ধশত নারী-পুরুষ।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে গ্রেপ্তার এড়াতে শিকদারবাড়ী ও পাগলাবাড়ীর লোকজন বাড়িতে থেকে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। এই সুযোগে শেখবাড়ীর লোকজনসহ তাদের পাশের এলাকার আত্মীয়স্বজন শিকদারবাড়ীর ও পাগলাবাড়ীসহ তাদের স্বজনদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এতে হামলার শিকার কয়েকশ বাড়িঘর প্রায় ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়। সহায়সম্বল, ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় ওইসব পরিবারের সদস্যরা।
পরবর্তী সময়ে সংঘর্ষে জোড়া হত্যার ঘটনায় শিকদার ও পাগলাবাড়ীর আড়াইশজনকে আসামি করে থানায় দুটি মামলা করে প্রতিপক্ষ শেখবাড়ীর লোকজন।
মকবুল শেখ হত্যার ঘটনায় তাঁর ভাই আক্কাছ শেখ বাদী হয়ে ১১৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে একটি এবং পাভেল শেখ হত্যার ঘটনায় তাঁর ভাই শেখ উজ্জ্বল বাদী হয়ে ৯১ জনের নাম উল্লেখ করে অপর মামলাটি করা হয়। এই মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়ে ২০ থেকে ২৫ জনকে। আড়াইশ লোকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় গ্রেপ্তার এড়াতে গ্রাম দুটিতে বসবাস করা প্রতিপক্ষের বাড়িগুলো পুরুষশূন্য হয়ে যায়।
এদিকে, পরিবারের পুরুষ সদস্যরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়ানোর কারণে চলতি মৌসুমের প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির পাকা বোরোধান মাঠে পড়ে থাকলেও কেটে ঘরে তোলা যাচ্ছে না। এক ফসলি এই জমির ধানে সারা বছর তাদের খাদ্যের জোগান হলেও এখন যেন কিছুই করার নেই তাদের। তাই ধান কেটে ঘরে তুলতে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
পুরুষশূন্য হয়ে পড়ায় চলতি মৌসুমের পাকা বোরোধান ঘরে উঠানো নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। মাঠে মাঠে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির ধান পেকে থাকলেও কাটা যাচ্ছে না। ঝড়-বৃষ্টির দিন শুরু এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলের আগে এসব ধান ঘরে তুলতে না পারলে সারা বছরের খাদ্য সংকটে পড়বে পরিবারগুলো। কারণ চরাঞ্চলের এই জমিতে একটি মাত্র ফসল ফলে। এই অবস্থায় প্রশাসনের সহযোগিতায় পাকাধান ঘরে তোলার দাবি জানিয়েছে পরিবারের সদস্যরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন জানান, যাদের মামলার আসামি করা হয়েছে তারা বাদে অন্যেরা ধান কাটতে এলে কোনো সমস্য হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া মামলার আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়েও বাড়িতে ফিরে ধান কাটতে পারবে। তারপরও আমরা বিশেষভাবে নজর রাখব যেন কৃষকরা তাদের ধান কেটে ঘরে তুলতে পারেন।
ভৈরব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা ফারজানা জানান, আমি এলাকা পরিদর্শন করেছি। সবার সঙ্গে কথা হয়েছে। ধান কাটা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। প্রয়োজনে স্থানীয় কৃষি অফিসের মাধ্যমে মেশিনের সাহায্যে ধান কেটে কৃষকেদের ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে।