গোপালগঞ্জের ঘটনায় আরও ২ মামলা, আসামি ৫ হাজার

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় একটি এবং জেলা প্রশাসকের বাসভবন ভাঙচুরের ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে। আজ বুধবার (৩০ জুলাই) গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান মামলা দুটির বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালসহ ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০ থেকে ৬০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। এ মামলার বাদী সদর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (এসআই) মো. ফারুক হোসেন। সদর থানায় মামলা নং-৩২।
এনসিপি সমাবেশে হামলার ঘটনায় করা মামলায় আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৪৪৭ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে পাঁচ হাজার জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। এ মামলার বাদী সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. মতিয়ার মোল্লা। তিনি গতকাল মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) মামলাটি করলেও আজ বুধবার মামলার তথ্য নিশ্চিত করেন সদর থানার ওসি।
এ মামলার আসামিরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান, সহসভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র শেখ রাকিব হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকু, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কবির, সাধারণ সম্পাদক আলিমুজ্জামান বিটু, শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী নাঈম খান জিমি,জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এম মাসুদ রানা, সাবেক সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগনেতা নিতীশ রায়, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়াল প্রমুখ।
মামলার বর্ণনায় বলা হয়েছে, ১৬ জুলাই এনসিপির সমাবেশস্থলে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং স্বাভাবিক কাজ থেকে বিরত রাখে। এ সময় পাঁচ সহস্রাধিক ব্যক্তি রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে। সরকারি কাজে বাধা ও সরকারি কর্মচারীদের আক্রমণ, হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল নিক্ষেপসহ যৌথ বাহিনীর সদস্যদের মারধর ও গুরুতর জখম করে।
এ নিয়ে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা, জেলা কারাগারসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ানোর অভিযোগে ও হত্যার ঘটনায় মোট ১৪টি মামলা করা হলো। সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় মামলাগুলো করা হয়। ১৪টি মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের এক হাজার ১৩৪ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১৪ হাজার ৫১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
১৬ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে হামলা চালায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পাঁচ ঘণ্টার হামলা-সহিংসতায় চারজনের মৃত্যু হয়। পরের দিন ১৭ জুলাই গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। পরে ঘটনার দিন বিকেলে শহরের ১১৪ ধারা ও রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। এর পর দ্বিতীয় দফায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত কারফিউর সময়সীমা বাড়ানো হয়। এরপর একাধিকবার কারফিউর সময় বাড়ানো হয়। ২০ জুলাই কারফিউ ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেয় জেলা প্রশাসন। এরপরগোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করে।