যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার নাগরিকদের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থার তাগিদ কোরিয়ার

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং যুক্তরাষ্ট্রে ‘হুন্দাই মোটর-এলজি’ গাড়ির ব্যাটারি তৈরির কারখানায় মার্কিন অভিবাসন সংস্থার অভিযানে দেশটির কয়েকশ নাগরিকের গ্রেপ্তারের ঘটনার বিষয়ে সাড়া দিতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আমেরিকার জর্জিয়া রাজ্যের সাভানা শহরের কাছে অবস্থিত এই কারখানায় প্রায় ৪৭৫ জন শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে ৩০০ জনেরও বেশি দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক। এটি ছিল মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের শাখা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কোনো একক স্থানে পরিচালিত সবচেয়ে বড় অভিযান। খবর আলজাজিরার।
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা ইয়োনহাপের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো হিউন শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বলেছেন, প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং কর্মকর্তাদের দ্রুত বিষয়টি সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের অধিকার, স্বার্থ এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগকারী দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিগুলির ব্যবসায়িক কার্যক্রমে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করা হবে না।
চো বলেন, সরকার জর্জিয়া রাজ্যে নির্মাণাধীন ওই স্থাপনায় ৩০০ জনেরও বেশি কোরিয়ানকে গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়া জানাতে একটি দল গঠন করেছে এবং প্রয়োজনে তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে ওয়াশিংটন ডিসিতেও যেতে পারেন।
শনিবার এই ঘটনা মোকাবিলায় একটি জরুরি বৈঠকের আগে ইয়োনহাপ চো-এর উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, ‘আমাদের নাগরিকদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং একটি গুরু দায়িত্ব অনুভব করছি।’
চো বলেন, ‘আমরা দেরি না করে ঘটনাস্থলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করব এবং প্রয়োজনে আমি ব্যক্তিগতভাবে ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করব।’
যে কারখানায় এই অভিযানটি চালানো হয়েছে সেটি বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য ব্যাটারি সরবরাহ করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। আর এই অভিযানটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্রমবর্ধমান অভিবাসন দমন কর্মসূচির একটি অংশ।
অভিবাসন অভিযান সম্পর্কে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে, শুক্রবার হোয়াইট হাউসে একটি অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মন্তব্য করেন, ‘আমি বলব যে তারা অবৈধ অভিবাসী এবং ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কেবল তার কাজ করছিল।’
ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কর্মকর্তা স্টিভেন শ্র্যাঙ্ক কোরীয় নাগরিকদের আটক করার ন্যায্যতা তুলে ধরে বলেন, আটককৃতদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি অবৈধভাবে মার্কিন সীমান্ত অতিক্রম করেছে, অন্যরা এমন ভিসা নিয়ে এসেছে যা তাদের কাজ করার অনুমতি দেয় না, এবং কিছু লোক তাদের কাজের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও অবস্থান করছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধী দল পিপল পাওয়ার পার্টি (পিপিপি) এই আটকের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, এবং সতর্ক করে বলেছে যে এটি দেশটির জন্য ‘একটি গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।’
পিপিপির চেয়ারম্যান জ্যাং ডং-হিউক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এটি একটি গুরুতর বিষয় যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে কোরীয় কোম্পানি এবং সম্প্রদায়গুলোর ওপর ব্যাপক বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।’
পিপিপির সিনিয়র মুখপাত্র পার্ক সুং-হুন এই ঘটনার জন্য প্রেসিডেন্ট লি-কে দায়ী করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তার ‘বাস্তববাদী কূটনীতি’ দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা দুটি বিষয়ই নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
পার্ক সুং বলেন, লি-এর সরকার এমনকি ট্রাম্পের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক বৈঠকে অন্তত ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তবে তা কেবল দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের বিরুদ্ধে একটি ‘দমন’ অভিযানে ফল দিয়েছে।
এক বিবৃতিতে, হুন্দাই জানিয়েছে যে তারা পরিস্থিতির ওপর ‘নজর’ রাখছে এবং বলেছে যে, আটককৃতদের মধ্যে কেউই কোম্পানির মাধ্যমে ‘সরাসরি নিযুক্ত’ নয়।

এলজি এনার্জি সলিউশন জানিয়েছে যে, তারা সকল প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করছে এবং বলেছে যে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুরোপুরি সহযোগিতা করবে।
এশিয়া মহাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি দক্ষিণ কোরিয়া একটি প্রধান গাড়ি নির্মাতা এবং ইলেকট্রনিক্স উৎপাদক দেশ, যাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক কারখানা রয়েছে। তাদের কোম্পানিগুলো মার্কিন বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের শুল্কের হুমকি এড়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা নির্মাণে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।