অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করে ভারতীয় সংসদে বিল পাস

ভারতীয় সংসদে বহুল আলোচিত অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধকরণ বিল পাস হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিভিন্ন কোম্পানি বছরে প্রায় দুই হাজার ৩০০কোটি ডলার আয় করছিল, যা গড়ে ৪৫ কোটি মানুষের কাছ থেকে গেমস ও বেটিংয়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। খবর আল জাজিরার।
নতুন আইন অনুযায়ী, অনলাইন কার্ড গেমস, পোকার ও ফ্যান্টাসি স্পোর্টস প্ল্যাটফর্ম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হবে। এর ফলে ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্যান্টাসি ক্রিকেট অ্যাপসহ বিভিন্ন হোমগ্রাউন প্ল্যাটফর্মও কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান স্পনসর হয় ড্রিম ১১। টিম ইন্ডিয়ার জার্সিতেও তাদের লোগো ছাপা রয়েছে। তবে নতুন আইনের কারণে স্পনসরশিপ অব্যাহত রাখা যাবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিসিসিআই (ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড) সচিব দেবজিত সাইকিয়া শুক্রবার (২২ আগস্ট) বলেন, “যদি অনুমোদিত না হয়, আমরা কোনোভাবেই এগোবো না। বোর্ড সবসময় কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি মেনে চলবে।”
প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং বিল বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সংসদের দুই কক্ষেই পাস হয়েছে। এতে অনলাইন জুয়া গেমস পরিচালনা, প্রচার বা অর্থায়নকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। দোষীদের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
ড্রিম ১১ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিল পাস হওয়ার পর তাদের সব ধরনের “ক্যাশ গেমস ও কনটেস্ট” বন্ধ করা হয়েছে। তবে তারা ভক্তদের উদ্দেশে জানায়, “সঙ্গে থাকুন, সামনে আরও কিছু আসছে।”
যদিও প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের পরেই আইনটি কার্যকর হবে।
ভারত সরকার জানিয়েছে, এই আইন আসক্তি, আর্থিক ধস ও সামাজিক বিপর্যয় রোধে সহায়ক হবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “এটি ই-স্পোর্টস ও অনলাইন সামাজিক গেমকে উৎসাহিত করবে, একইসঙ্গে সমাজকে অনলাইন অর্থভিত্তিক গেমের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করবে।”
তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, “এই আইন অনলাইন সামাজিক ও শিক্ষামূলক গেমের সঙ্গে টাকার বিনিময়ের জুয়ার গেমগুলোর মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য করছে। এতে ই-স্পোর্টসকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, কিন্তু মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবহারকারীদের শোষণকারী গেম নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।”
শিল্প সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ ও কর আরোপের দাবি জানালেও কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণের পথে হেঁটেছে। সমালোচকরা বলছেন, এতে অনেক খেলোয়াড় অবৈধ অফশোর প্ল্যাটফর্মে ঝুঁকতে পারেন। তবে সমর্থকদের মতে, সামাজিক ক্ষতির তুলনায় এটি কার্যকর পদক্ষেপ।

সরকার জানিয়েছে, অনলাইন জুয়ার দ্রুত বিস্তার দেশে আর্থিক সংকট, আসক্তি ও আত্মহত্যার ঘটনাও বাড়িয়েছে। পাশাপাশি প্রতারণা, অর্থপাচার ও সন্ত্রাসী অর্থায়নের সঙ্গেও এর যোগসূত্র পাওয়া গেছে।