ট্রাম্প চান সমঝোতা, জেলেনস্কি বললেন পরিস্থিতি জটিল করছে রাশিয়া

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধবিরতি মানতে রাশিয়ার অস্বীকৃতি যুদ্ধ শেষের প্রচেষ্টাকে জটিল করছে।
এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে জেলেনস্কি বলেন, “আমরা দেখছি, রাশিয়া যুদ্ধবিরতির অসংখ্য আহ্বান প্রত্যাখ্যান করছে এবং কবে হত্যাযজ্ঞ থামাবে তা এখনও নির্ধারণ করেনি। এটাই পরিস্থিতিকে জটিল করছে।” খবর বিবিসির।
সোমবার (১৮ আগস্ট) ওয়াশিংটন ডিসি সফরে যাবেন ভলোদিমির জেলেনস্কি, যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন যে, তিনি জেলেনস্কিকে মস্কোর সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে করানোর আহ্বান জানাবেন।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নয়, বরং স্থায়ী শান্তিচুক্তির পথে যেতে চান। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি ট্রুথ সোশালে লিখেছেন, এটাই “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভয়াবহতা শেষ করার সেরা উপায়”, কারণ যুদ্ধবিরতি প্রায়ই “টেকে না”।
পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্পের ফোন কলে জেলেনস্কি স্থায়ী শান্তির আহ্বান জানান, তবে শর্ত রাখেন “হামলা বন্ধ” এবং হত্যাযজ্ঞ থামাতে হবে। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি মস্কোর সঙ্গে “টেকসই ও নির্ভরযোগ্য শান্তির” জন্য শর্ত জানান—বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং রাশিয়া দখলকৃত অঞ্চল থেকে অপহৃত শিশুদের ফেরত।
এদিকে, জানা গেছে, পুতিন ট্রাম্পকে যে শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে ইউক্রেনকে দোনবাসের দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে সরে আসতে হবে। এর বিনিময়ে রাশিয়া জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসনের যুদ্ধক্ষেত্রে হামলা বন্ধ করে দেবে।
ট্রাম্পও এর আগে বলেছেন, যেকোনো শান্তিচুক্তিতে “কিছু ভূখণ্ড বিনিময়” থাকতে পারে। ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনায়ও তিনি পুতিনের প্রস্তাব শেয়ার করেছেন বলে জানা গেছে।
তবে মাত্র কয়েক দিন আগে জেলেনস্কি স্পষ্ট করে বলেছেন, দোনবাসের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেবেন না, কারণ এটি ভবিষ্যৎ রুশ আগ্রাসনের জন্য ‘ট্রাম্পোলিন’ হয়ে উঠতে পারে।
ইউরোপীয় কূটনীতিকরা উদ্বেগ জানিয়েছেন, ট্রাম্প জেলেনস্কিকে পুতিনের সঙ্গে আলোচিত শর্তে রাজি হতে চাপ দিতে পারেন।
সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, ট্রাম্প ইউরোপীয় নেতাদের বলেছেন, পুতিন “কিছু ছাড় দেবেন”, তবে সেটা কী তা উল্লেখ করেননি।
ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “আমার পরামর্শ একটাই—একটা চুক্তি করো। রাশিয়া অনেক বড় শক্তি, তোমরা নও।”
শুক্রবারের আলাস্কা বৈঠকে কোনো বড় সমঝোতা প্রকাশ করা না হলেও ট্রাম্প দাবি করেছেন, “অগ্রগতি হয়েছে।” পুতিনও বৈঠককে “খুবই কার্যকরী” আখ্যা দিয়ে বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের কাছে রাশিয়ার অবস্থান তুলে ধরতে পেরেছেন।
রুশ কূটনীতিক দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বিবিসি নিউশাওয়ারকে বলেছেন, বৈঠক ছিল “শান্তি প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি”। তবে পুতিন এখন জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করবেন কিনা সে বিষয়ে কিছু বলেননি।

এদিকে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি সমর্থিত “কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং” রোববার (১৭ আগস্ট) বৈঠকে বসবে। ইউরোপীয় নেতারা বিবৃতিতে বলেছেন, “পরবর্তী ধাপে জেলেনস্কিকে অন্তর্ভুক্ত করে আলোচনা জরুরি।”
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে প্রশংসা করে বলেছেন, “আমরা শান্তির সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছি।”
কিন্তু কিয়েভে অনেক ইউক্রেনীয় এই আলোচনার দৃশ্য দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন। দোনেৎস্ক অঞ্চলের সাবেক সেনা সার্হি অরলিক বলেন, “আলোচনায় হাত মেলানো স্বাভাবিক। কিন্তু পুতিনকে লাল গালিচা আর স্যালুট দেওয়া দৃশ্যটা ভয়াবহ, এর কোনো মানে হয় না।”