যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘আলাস্কা’ কেন বিক্রি করেছিল রাশিয়া?

ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনা করার জন্য শুক্রবার (১৫ আগস্ট) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৈঠকে বসেছেন। এই বৈঠকের স্থান ছিল আলাস্কা, যা এক সময় রাশিয়ারই অংশ ছিল। কিন্তু ১৮৬৭ সালে রাশিয়া কেন মাত্র ৭ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারে এই বিশাল অঞ্চল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল? এর পেছনে রয়েছে এক জটিল ইতিহাস।
১৭২৫ সালে রাশিয়ান জার পিটার দ্য গ্রেট যখন আলাস্কা উপকূলে অভিযাত্রী পাঠান, তখন থেকেই রাশিয়া এই প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ অঞ্চলে আগ্রহী ছিল। ১৭৯৯ সালে রাশিয়ান-আমেরিকান কোম্পানিকে আলাস্কার শাসনের একচেটিয়া অধিকার দেওয়া হয়। তবে, সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে বিশাল দূরত্ব, কঠোর জলবায়ু, সরবরাহের অভাব ও আমেরিকান অভিযাত্রীদের ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার কারণে রাশিয়ার পক্ষে এই অঞ্চল পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আলাস্কার অর্থনৈতিক লাভও কমে আসে।
আলাস্কা বিক্রির সবচেয়ে বড় কারণ ছিল ক্রিমিয়ান যুদ্ধ (১৮৫৩-১৮৫৬)। এই যুদ্ধে রাশিয়া ব্রিটেন ও ফ্রান্সের কাছে অপমানজনকভাবে হেরে যায়। যুদ্ধে রাশিয়ার ১৬০ মিলিয়ন পাউন্ড স্টার্লিং ব্যয় হয়, যা তাদের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়। এই পরিস্থিতিতে, জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার সিদ্ধান্ত নেন যে আলাস্কা বিক্রি করলে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ হবে ও ভবিষ্যতের যুদ্ধে ব্রিটিশরা এটিকে দখল করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্র এই বিশাল ভূখণ্ড কেনার জন্য ইচ্ছুক ক্রেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়।
১৮৬৭ সালের ৩০ মার্চ ওয়াশিংটন রাশিয়ার কাছ থেকে মাত্র ৭ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারে আলাস্কা কিনতে সম্মত হয়, যা প্রতি একরে দুই সেন্টেরও কম। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেকেই এই চুক্তির বিরোধিতা করেন, কারণ তাদের কাছে এটি ছিল বিশাল এক বরফের মরুভূমি। তারা একে ‘সিওয়ার্ডের বোকামি’ বা ‘সিওয়ার্ডের বরফের বাক্স’ বলে উপহাস করত। তবে, ১৮৯৬ সালে ক্লোনডাইক গোল্ড স্ট্রাইকের পর এই ধারণা পাল্টে যায়। আলাস্কার কৌশলগত গুরুত্ব ধীরে ধীরে স্বীকৃত হয় ও ১৯৫৯ সালে এটি আমেরিকার একটি রাজ্যে পরিণত হয়।

২০ শতকে আলাস্কার অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আসে। বাণিজ্যিক মাছ ধরা ও তামার খনি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে পরিণত হয়। তবে, সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে ১৯৬৮ সালে প্রুধো উপসাগরে বিশাল তেলের মজুদ আবিষ্কারের পর। তেলের রাজস্ব আলাস্কার অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি হয়ে ওঠে, যা থেকে বাসিন্দাদের বার্ষিক লভ্যাংশও দেওয়া হয়। বর্তমানে আলাস্কার অর্থনীতি প্রাকৃতিক সম্পদ, মাছ ধরা ও পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল।
এদিকে, আলাস্কার ইতিহাসের এই প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আশা করছেন, ট্রাম্প ও পুতিনের আসন্ন বৈঠকে কোনো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।