অপরাধ দমনে কঠোর ট্রাম্প, ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অপরাধ ও গৃহহীনতা দমনে কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সোমবার (১১ আগস্ট) তিনি “জননিরাপত্তা জরুরি অবস্থা” ঘোষণা করে শহরে ৮০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দেন এবং ডিসির পুলিশ বাহিনীকে সরাসরি ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নেন। খবর বিবিসির।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “এটি সম্পূর্ণ আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়া। আমাদের রাজধানীকে আমরা অপরাধ, রক্তপাত ও বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত করব।” তিনি দাবি করেন, ওয়াশিংটন ডিসি “সহিংস গ্যাং, রক্তপিপাসু অপরাধী, মাদকাসক্ত ও গৃহহীনদের” দখলে চলে গেছে।
তবে শহরের মেয়র মুরিয়েল বাউজার প্রেসিডেন্টের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ২০২৩ সালে অপরাধ বৃদ্ধি পেলেও, পরিসংখ্যান বলছে এরপর তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। শহরের মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে হত্যাকাণ্ডের হার ৩২ শতাংশ কমেছে এবং এ বছর আরও ১২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা ২০১৯ সালের পর সর্বনিম্ন।
বাউজার এমএসএনবিসিকে বলেন, “আমরা কোনো অপরাধের উল্লম্ফন দেখছি না। প্রেসিডেন্ট আমাদের প্রচেষ্টার ব্যাপারে খুবই অবগত।”
প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানিয়েছেন, সপ্তাহের শেষ নাগাদ ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা পৌঁছাবেন। তবে যেকোনো সময় ১০০ থেকে ২০০ জন সদস্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করবেন।
ট্রাম্প ডিসির পুলিশ বিভাগকে “ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া হোম রুল অ্যাক্ট” অনুযায়ী সরাসরি ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। এই আইনটি ১৯৭৩ সালে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রবর্তন করেছিলেন, যা ডিসির বাসিন্দাদের কাউন্সিল ও মেয়র নির্বাচনের ক্ষমতা দেয়, তবে জরুরি পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টকে পুলিশ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাও প্রদান করে।
বাউজার বলেন, “আইনে নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে, যার ভিত্তিতে এটি করা যায়—বর্তমানে সেসব শর্ত বিদ্যমান নেই।” তিনি ন্যাশনাল গার্ডের স্থানীয় আইন প্রয়োগের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
অপরাধের পাশাপাশি ট্রাম্প গৃহহীনতা নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমরা বস্তি সরিয়ে দেব।” তবে গৃহহীনদের কোথায় পাঠানো হবে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি। ট্রাম্পের মতে, “রাজধানী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে তা আমাদের দেশের ভাবমূর্তির প্রতিফলন ঘটায়।”
ওয়াশিংটন ডিসির গৃহহীনদের সহায়তায় কাজ করা সংস্থাগুলো বলছে, গত পাঁচ বছরে শহরে গৃহহীনতার হার প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। সো আদারস মাইট ইট (এসওএমই) সংস্থার প্রধান রালফ বয়েড বলেন, ট্রাম্পের প্রস্তাব কেবল সমস্যাকে অন্যত্র সরিয়ে দেবে, সমাধান করবে না।
এদিকে হোয়াইট হাউসের বাইরে ট্রাম্পের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা “হ্যান্ডস অফ ডিসি” ও “প্রটেক্ট হোম রুল” স্লোগান দেন।

ট্রাম্প সাম্প্রতিক দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডিসির নেতৃত্ব নিয়ে সমালোচনা করছেন এবং অপরাধ ও গৃহহীনতা ইস্যুতে ডেমোক্র্যাট মেয়রকে দোষারোপ করছেন। গত সপ্তাহে এক প্রাক্তন সরকারি কর্মচারীর ওপর হামলার ঘটনার পর তিনি একে “আমেরিকার জন্য হুমকি” বলে উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প এর আগে জুন মাসে লস অ্যাঞ্জেলসে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানকালে দুই হাজার ন্যাশনাল গার্ড পাঠিয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০২১ সালে ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গার সময় ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছিল।