গাজায় পূর্ণ সামরিক অভিযান চালালে ‘বিপর্যয়কর পরিণতি’ হবে : জাতিসংঘ

জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইসরায়েল যদি গাজায় সামরিক অভিযান আরও সম্প্রসারণ করে, তবে তা “বিপর্যয়কর পরিণতি” ডেকে আনবে।
জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকা স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে বলেন, গাজা পুনরায় সম্পূর্ণভাবে দখলের যে পরিকল্পনার কথা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন বলে জানা গেছে, তা সত্য হলে “গভীরভাবে উদ্বেগজনক” হবে। খবর বিবিসির।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, নেতানিয়াহু এই সপ্তাহে তার নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠক করবেন। একটি উচ্চপর্যায়ের সূত্র বলেছে, “চাকতি ছুঁড়ে ফেলা হয়ে গেছে, এবার আমরা গাজা পুরোপুরি দখল করব এবং হামাসকে পরাজিত করব।”
নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৃহস্পতিবারের বৈঠকে এই পরিকল্পনা অনুমোদনের বিষয়টি উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি হয়তো যুদ্ধবিরতি আলোচনায় চাপ তৈরি বা কট্টরপন্থী জোটসঙ্গীদের সন্তুষ্ট করার কৌশলও হতে পারে।
জেনকা বলেন, “এই ধরনের পদক্ষেপ কয়েক মিলিয়ন ফিলিস্তিনির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং গাজায় থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের জীবন আরও বিপদের মুখে ফেলবে।”
তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে গাজা একটি ভবিষ্যত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং সেটিই থাকা উচিত।”
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা ইতোমধ্যে গাজার ৭৫ শতাংশ এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। নতুন পরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে বাকি অংশও দখল করে পুরো গাজা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া – যেখানে এখনও ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি বসবাস করছেন।
তবে ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও এই পরিকল্পনা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর চিফ অফ স্টাফসহ অনেক সামরিক কর্মকর্তা এই কৌশলের বিরোধিতা করছেন।
এ প্রসঙ্গে নাম না প্রকাশ করা সরকারি কর্মকর্তা বলেন, “যদি সেনাপ্রধানের জন্য এই পরিকল্পনা গ্রহণযোগ্য না হয়, তবে তাকে পদত্যাগ করা উচিত।”
গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এই সিদ্ধান্ত তাদের প্রিয়জনদের জন্য আরও বিপদ তৈরি করতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, ৫০ জন জিম্মির মধ্যে প্রায় ২০ জন এখনো জীবিত রয়েছেন।
জেনকা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পুনরায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “ইসরায়েল এখনো গাজায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিচ্ছে এবং যেটুকু অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, তা অত্যন্ত অপ্রতুল।”
তিনি আরও জানান, মে মাসের শেষ থেকে খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে হামলার কারণে ১ হাজার ২০০’র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে শুধু খাদ্যাভাবেই ১৫৪ জন মারা গেছেন, যার মধ্যে ৮৯ জন শিশু।
এছাড়া সামগ্রিকভাবে ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা গাজায় “মানবসৃষ্ট, ব্যাপক দুর্ভিক্ষ” চলছে বলে সতর্ক করেছে। শুধু চলতি মাসেই অপুষ্টিজনিত কারণে কমপক্ষে ৬৩টি মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে।
ইসরায়েল অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা ত্রাণ প্রবেশে কোনো বাধা দিচ্ছে না এবং “গাজায় দুর্ভিক্ষ নেই।”