ওবামার বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার’ অভিযোগ ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ তুলেছেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ “বংবং” মার্কোস জুনিয়রের সঙ্গে ওভাল অফিসে এক বৈঠকের সময় ট্রাম্প দাবি করেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় ওবামার প্রশাসন জনসাধারণকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য’ দিয়েছে এবং তিনি একটি ‘অপরাধচক্রের’ নেতা ছিলেন। খবর সিএনএন এবং আল জাজিরার।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “এই চক্রের প্রধান ছিলেন প্রেসিডেন্ট ওবামা — বারাক হোসেন ওবামা। তিনি দোষী। এটি ছিল রাষ্ট্রদ্রোহিতা, ষড়যন্ত্র এবং এমন অনেক কিছু যা আগে কখনও কল্পনাও করা হয়নি। তারা নির্বাচন চুরি করতে চেয়েছিল, বিভ্রান্তি তৈরি করেছিল।”
উল্লেখযোগ্য, ট্রাম্প নিজের ২০২০ সালের পরাজয় মানেননি এবং আগেও নির্বাচনী ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়েছেন। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি আবারও ২০১৬ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে ওবামার বিরুদ্ধে নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছেন।
২০১৬ সালের শেষদিকে সিআইএ জানায়, রাশিয়া মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে ট্রাম্পকে সুবিধা দিতে চেয়েছিল। এর জবাবে ওবামা প্রশাসন রুশ কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে এবং নিষেধাজ্ঞা দেয়। ২০১৭ সালের গোয়েন্দা মূল্যায়নে এই হস্তক্ষেপকে “ব্যাপক ও সংগঠিত প্রচেষ্টা” বলে অভিহিত করা হয়।
তবে ২০১৯ সালের বিশেষ কৌঁসুলির প্রতিবেদনে ট্রাম্পের প্রচারণা দল রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি ষড়যন্ত্র করেছে – এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তুলসি গ্যাবার্ডের রিপোর্ট ঘিরে বিতর্ক
ট্রাম্প তার বক্তব্যে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন। ১৮ জুলাই প্রকাশিত সেই বিবৃতিতে গ্যাবার্ড দাবি করেন, ওবামা ও তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা ‘ইচ্ছাকৃতভাবে গোয়েন্দা তথ্য বিকৃত করে’ ট্রাম্পকে সরানোর জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্র শুরু করেছিলেন।
গ্যাবার্ড আরও বলেন, “তাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে আমেরিকান জনগণের ইচ্ছাকে পদদলিত করা। সকল ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
তিনি ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (ডিওজে)-কে এ বিষয়ে তদন্তের জন্য নথিপত্রও জমা দিয়েছেন বলে জানান।
তবে বিশ্লেষকরা গ্যাবার্ডের রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকেই বলছেন, তিনি বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সারাংশ ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছেন।
২০১৭ সালের গোয়েন্দা রিপোর্টে কোথাও বলা হয়নি যে রাশিয়া ভোট গণনায় হ্যাক করেছে। বরং তারা জনমত প্রভাবিত করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া তথ্য ছড়ানো, হ্যাকড তথ্য প্রকাশ এবং নির্বাচনী সংস্থাকে লক্ষ্য করে প্রচারণা চালিয়েছিল।
রিপাবলিকানদের নেতৃত্বাধীন সিনেট তদন্ত ও বিচার বিভাগের নিজস্ব তদন্তও রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল।
গ্যাবার্ডের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটদের প্রতিক্রিয়া
গ্যাবার্ডের এসব দাবিতে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ভার্জিনিয়ার সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার বলেন, “জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েও গ্যাবার্ড এখন প্রেসিডেন্টের ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্যকে সমর্থন করছেন।”
বারাক ওবামার দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “তুলসি গ্যাবার্ডের দাবিগুলো উদ্ভট। সম্প্রতি প্রকাশিত কোনো নথিই এই ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে না যে রাশিয়া ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ভোটে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেনি।”

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া এবং ভাইরাল ভিডিও
গ্যাবার্ডের বিবৃতির পেছনে ট্রাম্প শক্তভাবে অবস্থান নিয়েছেন। সোমবার তিনি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে দেখা যায় ওবামাকে হোয়াইট হাউসে হাতকড়া পরানো হচ্ছে এবং পেছনে “ওয়াইএমসিএ” গান বাজছে।
ট্রাম্প দাবি করেন, “এই ভিডিওটাই প্রমাণ – অপরিসীম প্রমাণ – যে ওবামা রাষ্ট্রদ্রোহে যুক্ত ছিলেন এবং ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন।”