যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৮২

চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনা ও ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক রাফায় স্থানান্তরের পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনার মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৮২ জন নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ভোর থেকে এই হামলাগুলো চালানো হয়। খবর আলজাজিরার।
নিহতদের মধ্যে মধ্য গাজার দেইর এল-বালাহে শিশুদের জন্য পুষ্টি সরবরাহের লাইনে অপেক্ষারত অবস্থায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৯ শিশু ও চার নারীসহ মোট ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। হামলায় ১৯ শিশুসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) পরিচালক ক্যাথেরিন রাসেল ত্রাণপ্রার্থীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ত্রাণ চাইতে আসা পরিবারগুলোকে হত্যা করাটা ‘অবিবেচনাপ্রসূত’। ইউনিসেফ কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, এই ঘটনাটি গাজার মানুষের জন্য এক ‘নিষ্ঠুর বাস্তবতা’। কয়েক মাস ধরে অপর্যাপ্ত সাহায্য সরবরাহ ও সংঘাতের পক্ষগুলোর বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় ব্যর্থতার ফলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, সাহায্যের অভাবে শিশুরা অনাহারের মুখে পড়ছে ও দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়ছে। জীবন রক্ষাকারী সাহায্য ও পরিষেবা পুরোপুরি চালু না হওয়া পর্যন্ত অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
রাসেল ইসরায়েলকে ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের পূর্ণ সম্মতি’ নিশ্চিত করার ও ঘটনার তদন্ত পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে, হামাস এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে ও এটিকে ইসরায়েলের উপত্যকায় গণহত্যার চলমান অভিযানের অংশ বলে অভিহিত করেছে। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি বলেছে, স্কুল, রাস্তা, বাস্তুচ্যুতি শিবির ও বেসামরিক কেন্দ্রে নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল তার নৃশংস গণহত্যা বাড়িয়ে তুলছে, যা একটি নিয়মতান্ত্রিক আচরণ যা বিশ্বের সামনে একটি সম্পূর্ণ জাতিগত নির্মূল অপরাধের সমান।
গাজায় সাহায্য বাড়াতে ইইউ চুক্তি
যুদ্ধের সম্মুখ সারির বাইরে বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান বলেছেন, ইউরোপীয় কর্মকর্তারা ইসরায়েলের সঙ্গে একটি নতুন চুক্তি করেছেন, যার লক্ষ্য গাজায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ করা।
২৭ সদস্যের ইইউ-এর শীর্ষ কূটনীতিক কাজা ক্যালাস বলেন, এই চুক্তির ফলে আরও বেশি ক্রসিং খোলা, ত্রাণ ও খাদ্য ট্রাক গাজায় প্রবেশ, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো মেরামত ও ত্রাণ কর্মীদের সুরক্ষা সম্ভব হতে পারে। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টে লিখেছেন, আমরা ইসরায়েলের ওপর নির্ভর করছি যে, তারা সম্মত প্রতিটি পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করবে।
সাহায্য গোষ্ঠীগুলো বলছে, ইসরায়েলি সামরিক বিধিনিষেধ ও বারবার সহিংসতার কারণে মে মাসে ইসরায়েল সম্পূর্ণ অবরোধ শিথিল করার পরেও গাজায় সহায়তা সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ইসরায়েলের যুদ্ধের ২১ মাস পর এই অঞ্চলটি দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।
ক্যালাস বলেছেন, এই চুক্তি জর্ডান ও মিশর থেকে সাহায্য করিডোর পুনরায় সক্রিয় করবে এবং গাজা জুড়ে কমিউনিটি বেকারি ও রান্নাঘর পুনরায় চালু করবে। ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার ভিয়েনায় একটি সম্মেলনে যোগদানের সময় চুক্তিটি স্বীকার করে বলেছেন, এটি ইইউ-এর সঙ্গে আমাদের সংলাপের পরে এসেছে। তিনি বলেছেন, চুক্তিতে আরও বেশি ট্রাক, আরও ক্রসিং ও মানবিক প্রচেষ্টার জন্য আরও রুট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তবে, সার বা ক্যালাস কেউই নির্দিষ্ট করে বলেননি সাহায্যটি জাতিসংঘ পরিচালিত ব্যবস্থার মাধ্যমে যাবে নাকি বিতর্কিত বিকল্প, মার্কিন ও ইসরায়েলি সমর্থিত জিএইচএফ ব্যবস্থার মাধ্যমে যাবে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েল গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার পর হামাস নেতৃত্বাধীন হামলায় ইসরায়েলে এক হাজার ১৩৯ জন নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে, গাজায় কমপক্ষে ৫৭ হাজার ৭৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন ও এক লাখ ৩৭ হাজার ৬৫৬ জন আহত হয়েছেন।