সুস্বাদু খাবার হালিম যেভাবে ঐতিহ্য, একতা ও ত্যাগের প্রতীক

হালিম একটি সুস্বাদু ও ঐতিহ্যবাহী খাবার। তবে পাকিস্তানে এটি শুধু খাবারের পদ নয়; শত শত বছর ধরে চলে আসা সংস্কৃতির অংশ। মহররম মাস এলেই করাচি, লাহোরসহ সারা দেশে এক বিশেষ চিত্র চোখে পড়ে— ঐতিহ্যবাহী খাবার হালিম তৈরির মহোৎসব। যা শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান ভ্রাতৃত্ব, একতা এবং সহমর্মিতার এক অনন্য প্রতীক হয়ে উঠেছে।
সম্মিলিত আয়োজন
মহররমের ৯ ও ১০ তারিখে (আশুরার আগের ও আশুরার দিনে) শহরের অলিগলি, রাস্তাঘাট, ফুটপাত ও খোলা মাঠে হালিম রান্নার আয়োজন করা হয়। যে তরুণরা সাধারণত খেলাধুলায় মত্ত থাকে, তাদেরই দেখা মেলে অস্থায়ী চুলা তৈরি করতে ইট বা কাঠের টুকরা সংগ্রহ করতে। কচি হাতগুলো তখন ব্যস্ত থাকে পেঁয়াজ কাটতে, গম ও ডাল ধুতে, মাংস পরিষ্কার করতে এবং বিশাল কড়াইয়ে হালিম নাড়তে। সারারাত ধরে চলে রান্না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা হালিম নাড়াচাড়া করা, উপকরণ প্রস্তুত করা—এসব কাজে কেউ ক্লান্ত হলে অন্য কেউ এগিয়ে আসে। পালা করে কাজ চলে, কিন্তু কেউ পিছিয়ে পড়ে না। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা কেবল একটি খাবার তৈরির উদ্যোগ নয়, বরং একটি মিলনমেলার প্রতিচ্ছবি।
'নিয়াজ' বিতরণ
এই দুই দিনে যে হালিম তৈরি হয়, তার সিংহভাগই ‘নিয়াজ’ হিসেবে বিতরণ করা হয়। নিয়াজ হলো ধর্মীয় মানত বা শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে বিতরণ করা খাবার। আশুরার দিনে মানুষরা যখন ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের শোক পালন করেন। তখন এই হালিম শোকাহত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এর পাশাপাশি বন্ধু, আত্মীয়স্বজন ও দরিদ্রদের মাঝেও এটি বিতরণ করা হয়। এটি শোকের সময় সকলের প্রতি সহানুভূতি ও দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার এক মহৎ প্রথা।

একতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি
হালিম বিতরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো এর মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। এই ঐতিহ্যবাহী খাবারটি যারা রান্না করেন, তাদের বেশিরভাগই সুন্নি সম্প্রদায়ের মানুষ। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনোরকম ভেদাভেদ ছাড়াই এই খাবার তৈরি করে তাদের শিয়া ভাই-বোনদের কাছে পৌঁছে দেন। এর মাধ্যমে ধর্মীয় সম্প্রীতির এক নজিরবিহীন উদাহরণ সৃষ্টি হয়। এটি দেখিয়ে দেয়, বিশ্বাসের ভিন্নতা সত্ত্বেও মানুষ কীভাবে মানবিক বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে পারে।
পাকিস্তান ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডনের প্রতিবেদন থেকে অনূদিত।