গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৭২ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় বুধবার (১৮ জুন) ভোর থেকে অন্তত ৭২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৯ জন খাদ্য সহায়তা পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্য গাজার সালাহউদ্দিন সড়কের নিকট নেতজারিম করিডোরে খাদ্য সহায়তা নিতে আসা লোকজনের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালায়। এতে ১০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
গাজা শহরের দক্ষিণের জেইতুন এলাকায় এক বাড়িতে বিমান হামলায় ৮ জন নিহত হন।
গাজার দক্ষিণের আল-মাওয়াসি শরণার্থী ক্যাম্পে বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুতে হামলায় আরও ৮ জন প্রাণ হারান, যাদের মধ্যে একজন নারী ও দুই শিশু রয়েছে।
মধ্য গাজার মাঘাজি ক্যাম্পে একই পরিবারের স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন।
হামাস ইসরায়েলি বাহিনীর এসব হামলাকে “যুদ্ধাপরাধ” বলে আখ্যা দিয়ে বলেছে, “ক্ষুধার্তদের ওপর হামলা, বাসিন্দাদের উচ্ছেদ এবং তথাকথিত ‘নিরাপদ’ এলাকার সীমাবদ্ধতা—এসব এক নিষ্ঠুর গণহত্যার অংশ।”
তারা আরও দাবি করেছে, বিতর্কিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’ এর তত্ত্বাবধানে থাকা বিতরণ কেন্দ্রগুলোকেও টার্গেট করা হচ্ছে।
আল জাজিরা জানায়, গাজার উত্তরে খাদ্য সহায়তার জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত ২০ জনের মরদেহ ৫ দিন ধরে রাস্তায় পড়ে ছিল। পরবর্তীতে জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয় কার্যালয়ের অনুমতির পর সেগুলো উদ্ধার করে সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা।
আল জাজিরার কাছে নিহত এক ব্যক্তির চাচা আহমেদ ঘাবেন বলেন, “আমার ভাতিজা তার বাচ্চাদের জন্য এক বস্তা আটা আনতে গিয়েছিল। কিন্তু সে ফিরে এলো মৃতদেহ হয়ে। তার ঘরে ১৪ জন সদস্য। সে কোনো যোদ্ধা ছিল না।”

আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজম জানান, “ইসরায়েলি বাহিনী সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করছে, যারা কেবল খাবার আনতে গিয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ড্রোন, ট্যাংক এবং স্নাইপার ব্যবহার করে গুলি চালানো হয়েছে।”
জিএইচএফ এর আওতায় মে মাসের শেষ দিকে সীমিত সহায়তা দেওয়া শুরু হলেও জাতিসংঘসহ প্রধান মানবিক সংস্থাগুলো এতে অংশ নেয়নি। তাদের দাবি, এই সংস্থা ইসরায়েলি সামরিক উদ্দেশ্যকে অগ্রাধিকার দেয় এবং বাস্তব সহায়তা না করে ধোঁকা দিচ্ছে।
মঙ্গলবার একদিনেই সহায়তা কেন্দ্রে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৭০ জন নিহত হন। গত মে মাসের পর থেকে ৩৯৭ জন খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়ে নিহত এবং তিন হাজারের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৬৩৭ জন এবং আহত ১ লাখ ২৯ হাজার ৮৮০ জন। জ্বালানির ঘাটতির কারণে গাজার হাসপাতালগুলোতে মাত্র তিন দিনের জ্বালানি রয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে হাসপাতালের জ্বালানি গুদাম এলাকায় যেতে দিচ্ছে না, যা হাসপাতাল বন্ধের হুমকি তৈরি করছে।
এই পরিস্থিতিতে ইয়েমেনের হুথি আন্দোলনের নেতা মাহদি আল-মাশাত বলেন, “ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত গাজাবাসীর প্রতি আমাদের সমর্থন চলবে। যত ত্যাগই হোক না কেন, আমরা থামব না।”