ট্রাম্পকে ১৩২ শব্দে নকআউট করেন মোহাম্মদ আলী

সদ্যপ্রয়াত কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী (৭৪) শুধু বক্সিংয়ের জন্যই বিখ্যাত ছিলেন না, একই সঙ্গে তিনি ছিলেন সোচ্চার অধিকারকর্মী। জীবনে বহুবার তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধসহ বহু অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন মোহাম্মদ আলী।
চলতি বছর অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়ান মোহাম্মদ আলী। ইংরেজি ১৩২ শব্দের এক বিবৃতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এক অর্থে ধরাশায়ী (নকআউট) করেন তিনি। ঘটনাটি ঘটে গত বছরের শেষ দিকে।
মার্কিন ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান দল থেকে সবে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। এর পরই শুরু হয় তাঁর বিতর্কিত সব কথাবার্তা। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া মেক্সিকানদের ধর্ষক বলে দাবি করেন ট্রাম্প। আর মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
ট্রাম্পের ইসলাম বিরোধিতার কড়া জবাব হিসেবে এক বিবৃতি দেন মোহাম্মদ আলী। ১৩২ শব্দের ওই বিবৃতিতে ট্রাম্পকে উল্লেখ না করেই তিনি লেখেন, ‘আমি একজন মুসলমান এবং প্যারিস, সান বার্নারদিনোসহ বিশ্বের অন্য যেকোনো স্থানে নিরপরাধ মানুষ হত্যায় ইসলামিক কিছু নেই। কথিত ইসলামিক জিহাদিদের নির্মম সহিংসতা ধর্ম বিশ্বাসের পরিপন্থী, যা প্রকৃত মুসলমানরা জানে।’
মোহাম্মদ আলী বিবৃতিতে আরো লেখেন, ‘মুসলমান হিসেবে আমাদের ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে, যারা ইসলামকে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যবহার করে। অনেককেই ইসলাম সম্পর্কে জানতে বিরত রেখেছে তারা। চেষ্টা করা এবং জোরপূর্বক কাউকে ইসলাম গ্রহণ করানো আমাদের ধর্মের বিরুদ্ধে সত্যিকারের মুসলমানরা এটি জানে অথবা জানা উচিত।’
মোহাম্মদ আলী আরো বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে কাউকে হেয় করেনি এমন একজন হিসেবে আমি মনে করি, আমাদের রাজনীতিবিদদের উচিত নিজেদের অবস্থান থেকে মানুষকে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানানো এবং এটি নিশ্চিত করা বিপথগামী হত্যাকারীরা প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে ভুল পথে পরিচালিত করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমান অভিবাসী নিষিদ্ধে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর প্রস্তাব, এই শিরোনামে মোহাম্মদ আলীর বিবৃতি পাঠানো হলেও ইসলামবিরোধী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তবে তিনবারের হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন মোহাম্মদ আলী এই বিবৃতিতে ঠিকই ধরাশায়ী করেছেন ট্রাম্পকে।
১৯৬৪ সালে ইসলামী সংগঠন নেশন অব ইসলামে যুক্ত হন মোহাম্মদ আলী। পরে ১৯৭৫ সালে সুন্নি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তাঁর নাম ক্লেসিয়াস ক্লে থেকে পরিবর্তিত হয়।
স্থানীয় সময় গত শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফনিক্সের এক হাসপাতালে মোহাম্মদ আলীর মৃত্যু হয়েছে। আগামী শুক্রবার লুইসভিলে তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।
১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে লাইট হেভিওয়েড বক্সিংয়ে সোনা জয়ের মধ্য দিয়ে মোহাম্মদ আলী খ্যাতি অর্জন করেন। এর পরপরই পেশাদার মুষ্টিযুদ্ধে লড়েন আলী। ‘দ্য গ্রেটেস্ট’ বলে খ্যাত এই মুষ্টিযোদ্ধা ১৯৬৪ সালে মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধা সনি লিস্টনকে হারিয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন। প্রথম মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে তিনবার হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন আলী। ৬১টি মুষ্টিযুদ্ধের ৫৬টিতেই জয় পান তিনি, এর মধ্যে ৩৭টিই ছিল নকআউট। ১৯৮১ সালে অবসর নেন মোহাম্মদ আলী।
১৯৯৯ সালে ক্রীড়া সাময়িকী ‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড’ মোহাম্মদ আলীকে ‘স্পোর্টসম্যান অব দ্য সেঞ্চুরি’ ঘোষণা করে। একই বছর বিবিসি তাঁকে ঘোষণা করে ‘স্পোর্টস পার্সোনালিটি অব দ্য সেঞ্চুরি’।