হার্ভার্ড শিক্ষার্থীর আগুনঝরা বক্তৃতা

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত ২৫ মে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে বক্তব্য দেন একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ডনোভান লিভিংস্টন। এতে তিনি একটি কবিতা পাঠ করেন, যা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরালের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। তার কবিতার বিষয় ছিল ভবিষ্যৎ শিক্ষাবিদদের নিয়ে, যারা শিশুদের পড়াবেন। এ ছাড়া মানুষের অধিকার ছিল তার কবিতাজুড়ে। প্রায় দুই হাজার ২০০ মানুষ তাঁর বক্তব্য সরাসরি শুনেছেন। ডনোভানের কবিতার ভিডিও লাখ লাখ মানুষ দেখেছে এবং এখনো দেখছে।
এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য কবিতাটি অনূদিত হলো :
‘মানব উৎপত্তির পর সব ব্যবস্থা ছাড়িয়ে শিক্ষাই
মানুষের অবস্থার সমতা আনে’-হোরাস মান, ১৮৪৮
তিনি যখন এ কথা বলেন, আমি পড়তে পারতাম না, লিখতে পারতাম না
প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আমরা জ্ঞানের অসীম ক্ষমতা বিষয়ে জেনেছি
এখনো কোনো এক কারণে আমরা চাবির জিম্মাদারকে কখনোই প্রশ্ন করিনি
দুর্ভাগ্যক্রমে, আরো বেশি বিভক্তি ও দখল দেখেছি
এই শক্তিপ্রয়োগে জঘন্য ভুল হিসাবের এক বাস্তবতা আছে
কেউ বলে, ক্লাসরুম আর আবাদের পার্থক্য কেবল সময়
নিজেদের কোটা ভাবতে কত সময় পার করেছি—
বানানো শব্দগুচ্ছের টোকেন কথা যেমন?
‘বৈচিত্র্য। অন্তর্ভুক্তি।’
এমনও আছে নিজেকে খুব একা মনে হয়, খুব একা-
রক্ষা না করা অঙ্গীকারের বাগানে নিঃসঙ্গ গোলাপ যেমন।
ঐক্যনাশক। বাচাল। চিত্তহরণকারী।
আমার সচেতনার কারাগারগুলো ছাড়িয়ে যাওয়া আবেগসহ—
আপনাদের কারিকুলামের বাইরে, বেঁধে দেওয়া আদর্শ ছাড়িয়ে
আমি দাঁড়িয়ে আছি, তা আমার ভালোবাসা ও বেদনার বহিঃপ্রকাশ
আমার শিরায় বিপ্লব সঞ্চারিত হচ্ছে
আমিই সেই অচিন ফল যা জনপ্রিয় গাছের জন্য একটু বেশি পাকা
আমিই এক মূর্তিমান ড্রিম অ্যাক্ট, ড্রিম ডেফারড
আমিই এক আন্দোলন—স্মৃতির এক মিশ্রণ যা আমেরিকা ভুলতে চায়
আমার অতীত, কেবল সেটাই আমাকে নিশ্চল বসে থাকতে দেয় না
তাই আমার শরীরকে, আমার মনের মতো,
দমন করা যাবে না
শিক্ষাবিদ হিসেবে শৃঙ্খলের মর্মরধ্বনির বিরুদ্ধে
কণ্ঠ জোরালো করার চাইতে
বাঁধন আলগা করুন। হাত খুলে দিন।
দারিদ্র্য ও বিশেষ সুবিধা,
নীতি ও অবজ্ঞার
ওজন মেরুদণ্ড থেকে কমিয়ে দিন
আমি তখন সেভেন গ্রেডে পড়তাম, মিসেস পার্কার একদিন আমাকে বলেন
‘ডনোভান, আমরা তোমার অতিরিক্ত শক্তি ভালো কাজে ব্যবহার করতে পারি!’
এবং তিনি আমার নিজের কণ্ঠের শব্দের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন
তিনি আমাকে মঞ্চ দিলেন। একটি প্ল্যাটফরম।
তিনি আমাকে বলেন, আমার গল্পগুলো হচ্ছে সোপান
যার সাহায্যে তারকা স্পর্শ করতে আমাদের জন্য সহজ হয়।
তাহলে ওপরে ওঠো, সেগুলো আঁকড়ে ধরো
উঠতে থাকো। ধরো।
তোমার আবেগ ছড়িয়ে দাও নক্ষত্রপুঞ্জে, ঢেলে দাও হৃদয়ে
তোমার ভাস্বর মোহিনী মন্ত্র নিয়ে পৃথিবী আলোকিত করো
শিক্ষাদানের জন্য গ্যালিলিওর মতো দৃঢ়তা চাই
আজ, আমি আমার ছাত্রদের চোখের দিকে তাকালে নক্ষত্রপুঞ্জ দেখি
আপনি বিন্দুগুলোকে একে অপরকে সংযুক্ত করলে
তাদের সত্যিকার প্রতিভা সম্পর্কে জানবেন
তাদের অন্ধকারতম সময়েও যা জ্বলজ্বল করছে
আমি ছাত্রদের প্রত্যেকের চোখে দিকে তাকাই
এবং একই আলো দেখি, যা ওরিয়ন বেল্ট ও
গিজার পিরামিডগুলোকে সংযুক্ত করেছে
আমি একই চিকমিক রেখা দেখি
যা হ্যারিয়েটকে স্বাধীনতা দিয়েছে
আমি সেগুলো দেখি। তাদের মুখোশ ও অনিষ্টের নিচে
একটি প্রকৃত হতাশা বিরাজমান;
আপনার আদর্শায়িত মূল্যায়নে এক দাসত্ববন্ধন
অন্তঃস্থলে, আমরা কেউ সাধারণ হতে জন্মায়নি
আমরা ধূমকেতু হতে জন্মেছি,
সবেগে মহাশূন্য ও সময়ের মধ্যে চলি—
যা কিছুতে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি চিহ্ন রেখে যাই।
অগ্নিমুখ স্মরণ করিয়ে দেয় আশ্চর্য কিছু ঘটছে এখানে—
এক অমোচনীয় প্রভাব যা পৃথিবীকে নাড়িয়ে দেয়।
আমরা কি জ্যোতির্বিজ্ঞানী নই—পরবর্তী উল্কার সন্ধান করি?
আমি পড়াই, বিষয়বস্তুকে মহাকাশে রূপান্তরের আশায়—
দুর্দশাকে টেলিস্কোপে রূপান্তরের আশায়।
যাতে শিশু যেখানে দাঁড়িয়ে, ঠিক সেখান থেকেই তাদের সম্ভাবনা দেখতে পায়
একটি অন্যায় তাদের বলছে যে তারা নক্ষত্র
তাদের চারপাশে ঘিরে থাকা অন্ধাকারকে স্বীকৃতি না দিয়ে
এক অন্যায় তাদের বলছে, শিক্ষাই চাবি
যখন আপনারা তালাই বদলে ফেলছেন
শিক্ষা কোনো সমতা আনয়ন করে না--
বরং আমেরিকান ড্রিমের আগেই আমরা ঘুমিয়ে আছি
তাহলে জেগে ওঠো—জেগে ওঠো! তোমার কণ্ঠ ছাড়ো জোরে
একটি শিশুর ভগ্ন আকাশে প্রতিটি গর্ত জোড়া না লাগা পর্যন্ত
প্রত্যেক শিশুকে জাগিয়ে তোলো, যেন নিজেদের স্বর্গীয় সম্ভাবনা জানতে পারে
দীর্ঘ সময় ধরে ক্লাসরুমে আমি কৃষ্ণগহ্বর ছিলাম;
সবকিছু শুষে নিয়ে, আমার আলোর নিঃসরণ করতে না দিয়ে।
কিন্তু সেসব দিন এখন বিগত। আমি তারকাদের অন্তর্ভুক্ত।
এবং তোমরাও তেমন। এবং তারাও তেমন।
একসঙ্গে আমরা মাহাত্ম্যের ছায়াপথ গড়ে তুলি
আগামী প্রজন্মের জন্য
না, আকাশই শেষ সীমা নয়। এটাই মাত্র শুরু।
ওড়ো।