স্বতন্ত্র নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বার্নি স্যান্ডার্স !

সামনে আর কয়েকটা দিন। এরপর জুলাইয়ের ২৫ থেকে ২৮ তারিখ ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশন। আর এই কনভেনশনেই নির্ধারিত হবে নভেম্বর মাসে হতে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে কে লড়বেন।
সাবেক ফার্স্টলেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন দলের প্রার্থিতার মনোনয়ন পেতে এরই মধ্যে অনেকটা এগিয়ে গেছেন। মনোনয়নের এই দৌড়ে তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বার্নি স্যান্ডার্স কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও এখন তিনি এগোচ্ছেন ভিন্নপথে।
নিয়ম অনুযায়ী, যখন একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী একটি রাজ্যে জয় পান, তখন সে রাজ্যে দলের যে নির্ধারিত ডেলিগেটস (প্রতিনিধি) থাকেন, তাঁদের ভোট প্লেজ ডেলিগেটস নামে পরিচিত হয়ে যায়। আর সুপার ডেলিগেটস হলো, দলের শীর্ষ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ভোট।
এই সুপার ডেলিগেটরা কনভেনশনের আগ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে অন্য প্রার্থীকেও ভোট দিতে পারেন। তবে প্লেজ ডেলিগেটরা তা পারেন না।
দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে দুই ধরনের ডেলিগেটস মিলিয়ে মোট দুই হাজার ৩৮৩টি ভোট প্রয়োজন। আর হিলারি ক্লিনটন এই লক্ষ্যের খুব কাছেই চলে এসেছেন।
মোট দুই হাজার ১৬৫ ডেলিগেটের ভোট রয়েছে হিলারির কাছে। অন্যদিকে স্যান্ডার্সের যেহেতু সুপার ডেলিগেটস সমর্থন একেবারেই কম, তাই শুধু প্লেজ ডেলিগেটস সমর্থনের ওপর ভর করে তাঁর সংগ্রহ এক হাজার ৩১৮ ভোট।
নিউইয়র্কের জয়টা পেলে হয়তো ২৬ এপ্রিল পূর্বাঞ্চলের পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয় তুলে নিতে পারতেন স্যান্ডার্স। কিন্তু সেটা হয়নি। জয়ের জোয়ার গেছে হিলারি ক্লিনটনের দিকেই।
এখন সামনের ৭ জুন হবে ক্যালিফোর্নিয়া প্রাইমারি নির্বাচন। ডেমোক্রেট শিবিরে যাকে বলা হচ্ছে নির্বাচনী মনোনয়নের শেষ বড় পরীক্ষা। এখানে স্যান্ডার্স তাঁর চার ভাগ ভোট বৃদ্ধি করে শেষ হিসাবে ৪৪ ভাগে টেনে এনেছেন। তবু হিলারি ক্লিনটনকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি কোনো নির্বাচনী জরিপে।
অবশ্য বার্নি স্যান্ডার্স ও তাঁর সমর্থকরা বারবার বলছেন যে ক্যালিফোর্নিয়া হলো প্রকৃত প্রগতিশীলদের রাজ্য, তাই সেখানে স্যান্ডার্স জয় পাবেন এটা নিশ্চিত। যদি তিনি জয় পানও, তবু কি দলের মনোনয়ন আদায় করতে পারবেন স্যান্ডার্স?
হিলারি তো রাজ্য জয় আর ডেলিগেটস ভোট দুটোতেই এগিয়ে আছেন। তবে স্যান্ডার্সের যুক্তি হলো, মমেন্টাম বা জনজোয়ার তাঁর পক্ষে। তাই তিনিই মনোনয়নের দাবিদার।
কিন্তু এখন পর্যন্ত হিলারিকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো জনজোয়ার অন্তত দেখা যায়নি পেনসিলভেনিয়া, মেরিল্যান্ড অথবা কানেক্টিকাটে। এ ছাড়া হিসাবনিকাশে ক্যালিফোর্নিয়ায় কিছুটা হলেও পিছিয়ে আছেন বার্নি।
তবে কি পিছিয়ে যাবেন বার্নি স্যান্ডার্স? তাঁর সাম্প্রতিক কথাবার্তা কিন্তু সেদিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে না।
আগামীকাল মঙ্গলবার ইন্ডিয়ানা এবং ৬ মে মেইন রাজ্যে প্রাইমারি ভোটের পর ৭ মে পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় হবে প্রাইমারি ভোট। এরপর ৭ জুন ক্যালিফোর্নিয়া, আর ১৪ জুন হবে ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রাইমারি ভোট। সেই পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়ে স্যান্ডার্স এখন ডেমোক্রেট দলকে তাদের ফোকাস বা লক্ষ্য ঠিক করতে বলছেন।
স্যান্ডার্স বলছেন, মেহনতি খেটে খাওয়া মানুষের দিকে দল থাকবে? নাকি ওয়াল স্ট্রিটের পক্ষের দল হিসেবে কাজ করবে? সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে দলকে। স্যান্ডার্সের এই সুর এসেছে পেনসিলভেনিয়া, মেরিল্যান্ড আর কানেকটিকাটে হিলারির কাছে পরাজয়ের পর।
নিউইয়র্কে পরাজয়ের পর স্যান্ডার্সের নির্বাচনী ক্যাম্প থেকে দাবি করা হয়েছিল যে, এখানে প্রায় এক লাখ ২৬ হাজার নতুন ভোটার ভোট দিতে পারেননি। কেননা তাঁরা স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে ছিলেন এবং একবারে শেষের দিকে যখন তাঁদের ভোট দেওয়া প্রয়োজন ভেবে নাম নিবন্ধন করেছেন, তখন দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার জটিলতার কারণে তারা ভোট দিতে পারেননি। এই নতুন ভোটাররাই আসলে স্যান্ডার্সের শক্তি। পূর্বাঞ্চলের পাঁচ রাজ্যেও একই ঘটনা ঘটেছে।
এখন তাই স্যান্ডার্স বলছেন, মনে রাখতে হবে সব সময়ই ভাসমান ভোটাররাই দলীয় জয়-পরাজয় নির্ধারণ করেন। অথচ এই ভাসমান ভোটারদের ভোট গণনা করা হচ্ছে না নির্বাচনী জরিপগুলোতে। সে কারণেই পদ্ধতিগত নির্বাচনী ফরম্যাটে জয়ী হতে পারছেন না স্যান্ডার্স।
মূল নির্বাচনী জরিপে জনপ্রিয় ভোটে হিলারির চেয়ে প্রায় সব সূচকে এগিয়ে আছেন স্যান্ডার্স। এ ছাড়া প্রতিপক্ষের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প অথবা টেড ক্রুজের বিরুদ্ধে জয়ের সম্ভাবনায় তিনিই শক্ত প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছেন।
কিন্তু ডেমোক্র্যাট ভোটাভুটি বা প্রাইমারি আর ককাসে কাঙ্ক্ষিত জয় না পাওয়ায় এখন ইন্ডিয়ানা, ক্যালিফোর্নিয়া আর ওয়াশিংটন ডিসির মতো রাজ্যগুলোর দিকে তাকিয়ে স্যান্ডার্স। এগুলোতে যদি জয় পান, তাহলে আবারও বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবেন হিলারির প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়া মনোনয়নের পথে।
আর যদি তা না হয়, তাহলে কী করবেন স্যান্ডার্স? হিলারিকে সমর্থন দিয়ে সুবোধ রাজনীতিক হিসেবে মাঠ ছেড়ে দেবেন? মনে হয় না। সাম্প্রতিক কোনো টেলিভিশন প্রশ্নোত্তরেই স্যান্ডার্স বলেননি যে, হিলারির জয়ে তিনি ভূমিকা রাখবেন। বলেছেন, রিপাবলিকানদের জয় ঠেকাতে যা করার তিনি সবই করবেন।
এ কারণেই বিশ্লেষক মহল ভাবছেন, স্যান্ডার্স হয়তো স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেননা তিনি ভাবছেন যে, হিলারি দলীয় মনোননয় পেলে রিপাবলিকানদের জয় ঠেকানো সম্ভব হবে না। আর তাঁর নির্বাচনী সমাবেশগুলোতে জনসমাগম এতটাই বেশি যে তিনি ভাবছেন, জনজোয়ার তাঁর দিকেই। তাই তিনি দলীয় মনোনয়ন যদি নাও পান, একাই বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম।
আইওয়াতে প্রথম ককাসে হিলারির সঙ্গে রীতিমতো সমান সমান ফলাফল করার পর স্যান্ডার্স তাঁর উজ্জীবিত সমর্থকদের বলেছিলেন, ‘তোমরা কি একটা রাজনৈতিক বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত? ’
শুধু যুক্তরাষ্ট্র তো নয় বিশ্বের অন্যতম সেলিব্রিটি রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ৭৪ বছর বয়সী এই নেতা। ফিলাডেলফিয়ার ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে থেমে যাওয়ার জন্য তো নয়। বরং আরো পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
ধনতন্ত্রের যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক ন্যায়বিচার আর অর্থের সুষম বণ্টনের যুদ্ধকে এ পর্যন্ত টেনে নিয়ে এসে জনমনে এর প্রয়োজনীয়তা প্রতিষ্ঠিত করেছেন স্যান্ডার্স। সেটাকে থামিয়ে দেবেন বলে তাঁর সাম্প্রতিক কথাবার্তায় মনে হচ্ছে না।