যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি দম্পতি খুনে বড় ছেলের দায় স্বীকার

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান হোসেতে বাংলাদেশি দম্পতি খুনের ঘটনায় বড় ছেলে দায় স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তা পুলিশের সার্জেন্ট প্যাট্রিক গুয়েরে জানান, নিহত দম্পতির বড় ছেলে হাসিব গোলাম রাব্বি (২২) তাঁর বাবাকে কয়েকটি গুলি করার কথা স্বীকার করেছেন।
এদিকে সান হোসের স্থানীয় পুলিশ মুখপাত্র ক্রিস্টোফার আটারটন জানান, হাসিবের স্বীকারোক্তির পর তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিল করেন পুলিশের সার্জেন্ট প্যাট্রিক গুয়েরে। এতে হাসিবের জবানবন্দি উদ্ধৃত করে বলা হয়, একজন অপরিচিত লোক হাসিবকে মারধর করে এবং তার বাবাকে গুলি করতে বাধ্য করে।
এদিকে হাসিবের ছোট ভাই ওমর গোলাম রাব্বি (১৭) জানিয়েছে, তার বড় ভাইই মা-বাবা দুজনকে হত্যা করেছেন। জবানবন্দিতে ওমর কোনো অপরিচিত লোকের কথা উল্লেখ করেনি বলে জানান গুয়ের।
এবিসি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গুয়ের বলেন, বাবা গোলাম রাব্বিকে হত্যার পর বড় ছেলে হাসিব ছোট ভাই ওমরকে মৃতদেহ পর্দা দিয়ে ঢেকে দিতে বলেন। এরপরই তিনি (হাসিব) তাঁর মাকে ঘরে গিয়ে হত্যা করেন।
তবে কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন গুয়ের।
গত সপ্তাহের রোববার ক্যালিফোর্নিয়ার সান জোস এলাকায় নিজেদের বাসায় গোলাম রাব্বি ও শামীমা রাব্বি নামে এক বাংলাদেশি দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার করেন তাঁদের বন্ধুরা। ঘটনার পরপরই মার্কিন পুলিশ জানিয়েছিল, উভয়কে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
আর যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এবিসি সেভেন নিউজকে ওই দম্পতির বন্ধুরা জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের দিন গোলাম রাব্বির বাসায় বন্ধুদের দাওয়াত ছিল। কিন্তু বারবার কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে রাব্বি দম্পতির বন্ধুরা ঘরে ঢোকেন এবং উভয়ের মৃতদেহ দেখতে পান। সেখানে কালিতে লেখা একটি বার্তাও পান তাঁরা। যেখানে লেখা ছিল, ‘দুঃখিত, আমার প্রথম খুনটা বেশ আনাড়িভাবে হয়েছে।’
রাব্বি দম্পতির বন্ধুরা আরো জানিয়েছিলেন, কয়েক দশক আগে তাঁরা বাংলাদেশ ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। গোলাম রাব্বি একজন প্রকৌশলী এবং শামীমা একজন অ্যাকাউনট্যান্ট। উভয়ে শান্ত ও নিপাট ভদ্রলোক ছিলেন বলেও উল্লেখ করেছেন বন্ধুরা।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর তদন্ত কর্মকর্তারা ওই বাড়ির দেয়ালে আরেকটি বার্তা দেখতে পান। তাতে লেখা ছিল, ‘তোমার মতো আমি মিথ্যাবাদী হতে পারব না। আমি ওদের (মা-বাবা) অজ্ঞাতে অথবা সম্মতি ছাড়া কাউকে ভালোবাসতে পারব না।’
এই ঘটনার পরপরও ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রাব্বি দম্পতির দুই ছেলেকে গত বুধবার আটক করে পুলিশ। পরে জামিন অযোগ্য আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় তাঁদের।
এর আগে কারাগারে থাকা অবস্থায় স্থানীয় গণমাধ্যম সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাসিব তাঁর ছোট ভাইকে ‘নির্দোষ’ দাবি করে পুরো ঘটনা খুলে বলার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমি পুরো ঘটনা সবাইকে জানাতে চাই, তবে আইনজীবীর উপস্থিতি ছাড়া তা বলব না।’
উল্লেখ্য, গোলাম রাব্বি বাংলাদেশের বগুড়া জেলার বাসিন্দা। ১৯৭৬ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র চলে যান। নয় বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে পঞ্চম গোলাম রাব্বি। তাঁর তিন বোন মারা গেছেন। বাকি চার বোনই যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। একমাত্র ভাই বাংলাদেশে বসবাস করছেন।