রান্না হয় বাংলাদেশে, খায়দায় ভারতে

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার বাগদা থানার বয়রা গ্রাম। সেখানকার ৬৭ বছর বয়সী বাসিন্দা রেজাউল মণ্ডল। ভারত-পাকিস্তান ভাগের সময় তাঁর বাড়ির উঠানের ওপর দিয়েই গেছে সীমান্ত। আর এতে করে ঘরবাড়ি, জমি-জিরাত সবই পড়েছে দুই দেশে।
urgentPhoto
সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডের বাসিন্দা রেজাউলের বসতভিটা ভারতে। আর রান্নাঘর পড়েছে বাংলাদেশের যশোরের গদাধরপুর গ্রামে। ফলে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের খাবার-দাবার রান্না হয়। আর ভারতে সেই খাবার খাওয়া হয়।
দুই পারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে রেজাউল মণ্ডলের বাড়ির ঠিকানা ৩৯/১১-এস নম্বর পিলার। দুই দেশের মধ্যে এই পিলারই সীমান্তের বিভাজন রেখা এঁকে দিয়েছে।
এমন বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে জানতে চাইলে রেজাউল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, কেবল রান্নাঘর নয়, গোয়ালঘরটিও পড়েছে বাংলাদেশ অংশে। এ ছাড়া সাত বিঘা জমি আছে বাংলাদেশে। আছে একটি পুকুর, একসময় যেখান থেকে মাছ ধরে নিয়ে ভারতে বিক্রি করতেন তিনি।
ভারতের ওই নাগরিক বলেন, কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় দিব্যি দুই দেশের বাসিন্দা হয়েই দিনযাপন করছেন। কিন্তু ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ আর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অতন্দ্র প্রহরার মধ্য দিয়েই জীবনযাপন করতে হয়।
কর দিতে হয় দুই দেশে
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রেজাউলের ১৬ বিঘা জমির মধ্যে ভারতে আছে নয় বিঘা। সেগুলো চাষাবাদ করেই সংসার চলে তাঁর। আগে দুই দেশের জমির ফসল, মাছ, তরকারি হামেশাই বাড়িতে নিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু বছর দুয়েক হলো, বিএসএফ ও বিজিবির নির্দেশে যে দেশের ফসল সেই দেশের মাটিতেই বিক্রি করে দিতে হয়। আর দুই দেশের জমি-জায়গার জন্য দুই দেশে কর জমা দিতে হয় তাঁকে। বাংলাদেশের যশোরের চৌগাছা থানার ৯ নম্বর স্বরূপদহ ইউনিয়ন পরিষদে যেমন কর ও খাজনা জমা দেন, তেমনি ভারতের বাগদা ব্লকে গিয়েও ট্যাক্স ও খাজনা জমা দেন তিনি।
মেয়েদের শ্বশুরবাড়ি বাংলাদেশে
রেজাউল মণ্ডল তাঁর মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের যশোর জেলায়। আর ছেলে হাফিজুর কাজ পেয়েছেন কলকাতা পুলিশে। কিন্তু এর পরও পরিবার নিয়ে সুখেই আছেন বলে জানান রেজাউল।
‘বিএসএফ ও বিজিবি আমাদের বাড়ির এ অবস্থানের কথা জানে। ফলে অযথা কেউই কখনো হয়রানি করেনি আমাদের’, বলেন রেজাউল।
‘জীবনের এতগুলো বছর যখন দুই দেশের সরকারের সহযোগিতায় নির্বিঘ্নে কাটাতে পেরেছি, আশা করছি, জীবনের বাকি দিনগুলোও সুখে-শান্তিতে দুই দেশের ঠিকানাকে সঙ্গী করে কাটিয়ে দিতে পারব’, যোগ করেন ভারতের ওই নাগরিক।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন বয়রা গ্রামে রেজাউলের মতো আরো অনেকেই রয়েছেন। তবে সীমান্ত পিলার গেছে কেবল রেজাউলের বাড়ির ওপর দিয়ে।