ব্যর্থ প্রতিবাদ, মুক্তি পেল নির্ভয়ার ‘নাবালক’ ধর্ষক

ভারতজুড়ে গত কয়েকদিনের প্রতিবাদ আর সমালোচনার পরও ২০১২ সালে দিল্লির আলোচিত নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত এক কিশোরকে মুক্তি দেওয়া হলো। এনডিটিভি জানিয়েছে, আজ রোববার দুপুরে দিল্লির কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এই ‘নাবালক’ ধর্ষককে মুক্তি দেওয়া হয়।
নির্ভয়ার বাবা-মা ওই ছেলেটির মুক্তি ঠেকাতে হাইকোর্টে একটি রিট করেও ব্যর্থ হয়েছেন। গতকাল শনিবার ছেলেটির মুক্তির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর নির্ভয়ার বাবা বলেছিলেন, নির্ভয়া হেরে গেছে, জিতে গেছে অপরাধ।
কারাগার কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, মুক্তির আগে অভিযুক্ত কিশোরের পুনর্বাসন নিশ্চিত করার সব রকম ব্যবস্থা করেছে সরকার। কিশোর সংশোধনালয়ে থাকার সময় দর্জির কাজ এবং রান্না করতে শিখেছিল ওই অপরাধী। মুক্তির পরে তাকে একটি সেলাইয়ের দোকান খুলে দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থা করা হয়েছে সেলাই মেশিনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর। এ ছাড়া আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ‘নাবালক’ ধর্ষককে এককালীন ১০ হাজার টাকা দিয়েছে দিল্লি সরকার।
কেন্দ্রীয় শিশুকল্যাণমন্ত্রী মানেকা গান্ধী জানিয়েছেন, এখন প্রায় ২১ বছরের ওই ধর্ষককে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ছেড়ে দেওয়া হলেও তাকে সার্বক্ষণিক একটি নজরদারিতে রাখা হবে। অন্য নাগরিকদের মতো সমাজে মুক্ত স্বাভাবিকভাবে বিচরণ করার অধিকার সে পাবে না। তবে তাকে নতুন করে আইনের আওতায় আনার কোনো সুযোগ নেই।
মানেকা গান্ধী আরো জানান, নির্ভয়ার ওই ঘটনার পর ভারতে এখন এই আইনটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে এই ছেলেটির মতো ঘৃণ্য অপরাধে যুক্ত কেউ এই আইনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসতে না পারে।
ভারতের আইন অনুযায়ী, অপরাধ ঘটানোর সময়ে কারো বয়স ১৮-এর কম হলে তাকে তিন বছরের বেশি কারাদণ্ড দেওয়া যাবে না। এদের বিচার হবে কিশোর আইনে এবং তাকে আটকে রাখাও হবে কিশোর সংশোধনাগারে। নির্ভয়া গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সময় ওই ছেলেটির বয়স ছিল ১৮ বছরের কয়েক মাস কম। আইনের এই সুযোগটির কারণেই সে তিন বছর কারাভোগের পর আজ মুক্তি পেল।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর জ্যোতি সিংকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর বাস থেকে ছুড়ে ফেলে হত্যার ঘটনা বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। জ্যোতি আর তাঁর এক বন্ধু মিলে দক্ষিণ দিল্লির একটি সিনেমা হল থেকে বাসায় ফেরার উদ্দেশে বাসে উঠলে ছয়জন দুর্বৃত্ত তাঁদের আক্রমণ করে। বাসে ঘণ্টাব্যাপী ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর জ্যোতিকে রাস্তার পাশে অর্ধমৃত অবস্থায় ছুড়ে ফেলা হয়।
জ্যোতিকে যখন উদ্ধার করা হয়, তখন তার পেটের নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু বেঁচে ছিলেন তিনি। বেঁচে থাকার জন্য তাঁর এই দুর্দান্ত সাহসিকতা দেখে তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল ‘নির্ভয়া’। প্রথমে দিল্লিতে এবং পরে সিঙ্গাপুরে ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর মারা যান তিনি।
২০১২ সালের এই বর্বরোচিত ধর্ষণের ঘটনা যখন জানাজানি হয় তখন ভারতের রাজধানীর রাস্তায় নেমে এসেছিলেন হাজার হাজার প্রতিবাদী মানুষ। এমনকি ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যখন আদালতে এই মামলার বিচারকাজ চলছিল, তখন এই ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল ছিল ভারতবাসী। কিন্তু বিচারের সব আবেদন ম্লান করে দিয়ে ‘আইনের ফাঁক গলে’ বেরিয়ে গেল ‘নাবালক’ ধর্ষক।