প্রসূতিকে বাঁচানোয় মুসলিম যুবকের নামে সন্তানের নাম

বন্যাবিধবস্ত ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের চেন্নাইয়ে গলা অবধি ডোবা পানির ভিতর থেকে এক আসন্নপ্রসবা নারীকে উদ্ধার করলেন মুসলিম এক যুবক। হাসপাতালে ওই নারী একটি মেয়ের জন্ম দেওয়ার পর ওই সন্তানের নাম রাখা হলো উদ্ধারকারী ওই মুসলিম যুবকের নামে।
অসহিষ্ণুতা নিয়ে বিতর্কের এই সময়ে ভারতের চেন্নাইয়ের দক্ষিণ শহরতলী এলাকায় ঘটেছে এই ব্যতিক্রমী ঘটনা। ভারতীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, নগরীর শহরতলীর উরাপক্কম এলাকায় থাকতেন মোহন এবং চিত্রা নামের এক দম্পতি। সম্প্রতি বন্যার পানিতে এলাকাটি প্লাবিত হওয়ার পর ওই এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে যাচ্ছিল ওই দম্পতি।
রাস্তার মধ্যে গলা সমান পানি ভেঙে তাঁরা যখন নিরাপদ স্থানের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন ঠিক তখনই চিত্রার প্রসব বেদনা ওঠে। এদিকে রাস্তায় পানি তখন গলা পর্যন্ত। এই অবস্থাতেই প্রসববেদনায় চিৎকার করে যাচ্ছিলেন চিত্রা। অসহায় স্বামী তাড়াহুড়া করে আরো নিরাপদ স্থানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় পড়ে যান পানির তোড়ের মধ্যে। মোহন কোনোক্রমে তাঁকে পানির তোড়ে ভেসে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখলেও কিছুতেই স্রোত থেকে বের করে আনতে পারছিলেন না। এদিকে দুর্বল চিত্রা দাঁড়িয়েও থাকতে পারছিলেন না।
এই অবস্থায় অসহায় দম্পতির চিৎকার পৌঁছায় ইউনুসের কানে। ১৫ জনের দল নিয়ে স্থানীয় এই ব্যবসায়ী তখন উদ্ধারকাজ চালাচ্ছিলেন। এমবিএ পাস এই ব্যবসায়ী প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় তোলেন চিত্রাকে। চেন্নাইয়ের রাজপথে প্রায় এক মানুষ জল কেটে এগিয়ে চলে নৌকা। মিনিট পনেরোর ওই বিপদসঙ্কুল যাত্রা চিরদিন মনে থাকবে‚ জানান চিত্রা ও মোহন।
অতি কষ্টে চিত্রাকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় পেরুঙ্গালাথুরের এক হাসপাতালে। সেখানেই তিনি জন্ম দেন মেয়ে সন্তানের। মা ও শিশু সুস্থ। খুশিতে আপ্লুত চিত্রা ও মোহন জানিয়েছেন‚ তাঁরা মেয়ের নাম রেখেছেন ইউনুস।
মোহন জানান,গলা সমান পানি থেকে সেদিন ইউনুস আমার স্ত্রীকে উদ্ধার করতে এগিয়ে না এলে সেদিন যে কী হতো সেটা ভাবতেই এখনো শিউরে উঠি। বিপদসঙ্কুল ওই যাত্রার কথা আমরা জীবনেও ভুলব না। তাই তো সদ্যোজাত মেয়ের নাম ইউনুসের নামেই রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।
সন্তানের জন্ম এবং নামকরণের কথা জানিয়ে ইউনুসকে মেসেজ করেন মোহন। নামকরণের কথা শুনে বিস্মিত ইউনুস নিজেও। জানিয়েছেন‚ অবশ্যই যাবেন শিশুটিকে দেখতে এবং সেইসঙ্গে তাঁর ঘোষণা‚ ভবিষ্যতে এই শিশুর পড়াশোনার সব ব্যয় বহন করবেন তিনি নিজে।