মৃত্যুর আগেই শেষকৃত্যের বুকিং!

মানুষ বিয়ে করে, সংসার করে, সন্তান জন্ম দেয়, তাদের লালন-পালন করে এবং পড়ালেখা শিখিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করে। এসব কিছুই করে নিজেরা সুখে থাকার আশায়। কিন্তু সন্তানরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর যে যার মতো থাকে। অনেকেই উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে পাড়ি জমায়। দেশে একা পড়ে থাকেন বৃদ্ধ মা-বাবা। তাঁদের দেখার কেউ থাকে না। অনেক সময় মৃত্যুর পর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করার মতোও কেউ থাকে না। মরদেহ ফেলে রাখা হয় স্বজনদের দেশে ফিরে আসার আশায়। তাই ভারতে এখন অনেক দম্পতিই মৃত্যুর আগেই তাঁদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দায়িত্ব দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে! তাঁরা অর্থ জমা দিয়ে বুকিংও দিচ্ছেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলোই তাঁদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন করে দেবে।
অবসরপ্রাপ্ত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার সুনীল কুমার শুকলা ও তাঁর স্ত্রী সুনীতা শুকলা মৃত্যুর পর তাঁদের শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্নের দায়িত্ব দিয়েছেন ‘মোক্ষশিল ডট কম’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে। তাঁরা তাঁদের নাম নিবন্ধন করিয়েছেন। সুনীল বলেন, ‘আমার বয়স ৭৫, আর আমার স্ত্রীর বয়স ৭০। আমাদের সন্তানরা বিদেশে বসবাস করে। আমরা জীবনের এমন একটা সময়ে রয়েছি যখন যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।’
শেষকৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে সুনীলের মনে কোনো সংশয় নেই। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানরা বলেছে, যখন প্রয়োজন পড়বে, তখনই তারা চলে আসবে। কিন্তু আমার আশপাশে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, মারা যাওয়ার পর স্বামী বা স্ত্রী কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে তাঁর শেষকত্যৃানুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘মোক্ষশিল ডট কম শবদেহ সুবাসিত করা থেকে শুরু করে দাহ করা এবং মৃত্যুসনদ সংগ্রহ করার কাজ করে।’
শেষকৃত্যানুষ্ঠানের জন্য সাড়ে চার হাজার রুপির চুক্তিতে সই করেছেন বলে সুনীল জানিয়েছেন। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, কয়েকজন ভারতীয় এমন কাজের উদ্যোগ নিয়েছে।
বারানসিভিত্তিক কাশিমোক্ষ ডট কমের সঙ্গে অনেক অনাবাসী ভারতীয় শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্নের চুক্তি করেছেন। কাশিমোক্ষ ডট কম নিবন্ধিত কাশিমোক্ষ ইনকরপোরেশনের একটি শাখা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান মৃত ব্যক্তির যেসব আত্মীয় দূরে রয়েছেন তাঁদের জন্য স্কাইপের মাধ্যমে শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্প্রচারের আয়োজনসহ মৃত্যু সংক্রান্ত সব কাজ করে।
কাশিমোক্ষ ডট কমের প্রধান রূপসী গুপ্তা বলেন, ‘প্রয়াত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের পক্ষে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীর আয়োজনও আমরা করি। পরে এই অনুষ্ঠানের ভিডিও সিডি করে তাঁদের কাছে পাঠিয়ে দিই।’
আহমেদাবাদের অধ্যাপক বিলভা ও দেশাই অভিজিৎ সিং মোক্ষশিলের পরিকল্পনাকারী। তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি সহজ ও সাধারণ অনলাইন ফরম রয়েছে। এ ছাড়া মৃত ব্যক্তির পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য পোর্টালে একটি হেলপলাইন রয়েছে। আমরা এরই মধ্যে ২০ জন ব্যক্তির শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন করেছি। ব্যক্তির ইচ্ছে অনুযায়ী তাদের অঙ্গদানের কাজও করে থাকি।’
১৯৮৯ সালে মুম্বাইভিত্তিক ইন্ডিয়ান ফিউনেরাল সার্ভিস (আইএফএস) প্রথমবারের মতো ভারতে এ ধরনের সেবা চালু করে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার কাজটি করছে।
আইএফএসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এলরয় নরোনহা বলেন, ‘যখন আপনি বিদেশ থেকে মরদেহ ফেরত আনতে যাবেন, তখন আপনাকে ইমিগ্রেশনের ছাড়পত্র, স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন এবং পুলিশ ও শুল্ক বিভাগের অনুমতির প্রয়োজন পড়বে।’ এই প্রতিষ্ঠান সারা বিশ্বে দূতাবাস, কনস্যুলেট এবং ২০০টি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছে। প্রতি মাসে এটি ২০টি মরদেহ দেশে ফেরত আনে।