আত্মনিষেধাজ্ঞা বন্ধ করুন, বাংলাদেশকে এইচআরডব্লিউ

বাংলাদেশে আত্মনিষেধাজ্ঞা আরোপের চেয়ে মুক্তমত প্রকাশের অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ওপর সরকারকে জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে নিউইয়র্কভিত্তিক সংস্থাটি এ আহ্বান জানায়।
urgentPhoto
বিবৃতিতে বলা হয়, ৭ আগস্ট ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর আবারো সবার নিরাপত্তা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। নীলাদ্রি ব্লগে নিলয় নীল নামে লিখতেন। এ বছরে তিনি চতুর্থতম ব্লগার, যাঁকে চরমপন্থীরা হত্যা করেছে। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার সমর্থন করে লেখালেখি করতেন। এই চারজনই চরমপন্থী সংগঠনের ৮৪ ব্লগার হত্যার তালিকায় ছিলেন। এ তালিকায় ব্লগারদের ইসলামবিরোধী ও ধর্ম অবমাননাকারী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘এটি খুবই দুঃখজনক যে, হত্যার হুমকি পাওয়ার পর ব্লগাররা পুলিশের কাছে অভিযোগ করা সত্ত্বেও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু তার বদলে আত্মনিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব দিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারকে মনে রাখা উচিত, সংবিধানকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে, জনগণের নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্লগার হত্যায় দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে লেখার জন্য ব্লগারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানে নিজ বাসায় ব্লগার নীলাদ্রিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ফেসবুকেও তিনি নিলয় নীল নামে ছিলেন। কয়েক মাস আগে হত্যার হুমকি পেয়ে তিনি পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা তাঁর অভিযোগ গ্রহণ করেননি। তিনি মুক্তমনা ও ইস্টিশন ব্লগে নিয়মিত লিখতেন। নীলাদ্রি নারী অধিকার, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু, মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার নিয়ে এবং ধর্মীয় চরমপন্থার সমালোচনা করে লেখালেখি করতেন।
নীলাদ্রিকে ‘আল্লাহ’র শত্রু’ আখ্যা দিয়ে এ হত্যার দায় স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের (একিউআইএস) বাংলাদেশ শাখা আনসার আল ইসলাম। ২০১৫ সালে নীলাদ্রি চতুর্থ ব্লগার ও পঞ্চম ব্লগার, যাঁকে হত্যা করা হলো। গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। মার্চে রাজধানীর বেগুনবাড়ীতে বাড়ি থেকে কাজে যাওয়ার সময় ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করা হয়। মে মাসে সিলেটে অন্তত রায়কে হত্যা করে উগ্রবাদীরা।