গবেষকদের অর্থ দেয় কোকাকোলা!

ক্যালরি গ্রহণ নিয়ে চিন্তা না করে, শরীরচর্চার মাধ্যমে ওজন ঠিক রাখার গবেষণায় অর্থায়ন করছে কোকাকোলা। চিনিসমৃদ্ধ কোমল পানীয় প্রস্তুতকারী বিশ্বের অন্যতম এই প্রতিষ্ঠানটির ‘বিজ্ঞানভিত্তিক’ এমন গবেষণায় অর্থায়ন নিয়ে সমালোচনা চলছে। অধিকাংশ গবেষকেরই মত, খাবারের কারণে যে স্থূলতা দেখা দেয় শরীরচর্চায় এর প্রতিক্রিয়া খুবই কম।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসে গতকাল রোববার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিজ্ঞানভিত্তিক’ স্থূলতা কমানোর এমন এক গবেষণায় কোকাকোলা অর্থায়ন করছে, যার মূলমন্ত্র হলো ওজন ঠিক রাখতে আরো ব্যায়াম কর এবং ক্যালরি গ্রহণ কমানো নিয়ে চিন্তা কম কর। আর স্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী, সম্মেলন আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন বার্তাকে সমর্থন দেওয়া প্রভাবশালী গবেষকদের সঙ্গে জোট বেঁধেছে কোকাকোলা। তবে এই তত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
প্রতিবেদন সূত্রে আরো জানা গেছে, নতুন গবেষণার জন্য গ্লোবাল এনার্জি ব্যালান্স নেটওয়ার্ক নামক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে অর্থে ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে কোক। ওই প্রতিষ্ঠানটি বিতর্ক তুলেছে, ওজনসচেতন মার্কিনিরা খাদ্য ও পানীয় নিয়ে বেশি সচেতনতা দেখায় কিন্তু ব্যায়ামের দিকে যথেষ্ট খেয়াল রাখে না।
গ্লোবাল এনার্জি ব্যালান্স নেটওয়ার্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট স্টিভেন এন ব্লেয়ার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, জনপ্রিয় সব সংবাদমাধ্যম ও বিজ্ঞান সাময়িকীতে বেশি খাওয়ার ব্যাপারটিকেই গুরুত্ব দেয় এবং বারবার বিষয়টি প্রচার করে। একই সঙ্গে ফাস্ট ফুড ও চিনিসমৃদ্ধ পানীয়কে দোষারোপ করা হয়। তবে এই নিয়ে কোনো পরিপূর্ণ প্রমাণ নেই।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন বার্তা ভুল পথে চালিত করতে পারে। আর স্থূলতা ও টাইপ টু ডায়াবেটিসের জন্য চিনিসমৃদ্ধ পানীয়কে দায়ী করে যে সমালোচনা চলে, তা পরিবর্তন করতেই কোক এই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নতুন একটি গ্রুপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি মানুষকে বোঝাতে চাইছে যে, ব্যায়ামের মাধ্যমে খাবার গ্রহণের নেতিবাচক দিক দূর করা যায়। প্রকৃতপক্ষে, এটি প্রমাণিত যে, মানুষের খাওয়ার ফলে যে স্থূলতা সৃষ্টি হয় তা দূর করতে ব্যায়ামের প্রভাব যৎসামান্য।
যুক্তরাষ্ট্রে স্থূলতা নিয়ে বিজ্ঞানীদের এই বিতর্ক এমন সময়ে এলো যখন, দেশটিতে চিনিসমৃদ্ধ পানীয়র ওপর কর বাড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে স্কুল থেকে এমন পণ্য সরিয়ে দেওয়া এবং শিশুদের কাছে এমন পণ্যের প্রচারণা বন্ধ করার কথাও উঠেছে। গত দুই দশকে মার্কিনিদের পূর্ণ ক্যালরিসম্পন্ন পানীয় গ্রহণ ২৫ শতাংশ কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গণস্বাস্থ্যবিষয়ক আইনজীবী মিচেলে সাইমন বলেন, কোকাকোলার বিক্রি কমছে এবং রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে চিনিসমৃদ্ধ পানীয়র ব্যাপারে আন্দোলন হচ্ছে। এমন পানীয় পানের হার কমাতে সব বড় শহরই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতি কমাতেই ভিন্নমতাবলম্বী গবেষকদের সঙ্গে উদ্যোগ নিয়েছে। ক্ষতি কমাতে তারা মরিয়া।
গ্লোবাল এনার্জি ব্যালান্স নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠার প্রদ্ধতি নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলতে গত বছর ১৫ লাখ মার্কিন ডলার খরচ করেছে কোক। এর ওয়েবসাইট জিইবিএন ডটঅর্গ (gebn.org) নিবন্ধন করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় কোকাকোলার সদর দপ্তরের ঠিকানায়। ওই ওয়েবসাইটের কোনো পরিবর্তন করার অধিকার রাখে কোক। তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব কলরাডো স্কুল অব মেডিসিনের গবেষক জেমস ও হিল বলেন, ওয়েবসাইট খোলা বিষয়ে তাদের জ্ঞান সীমিত তাই কোকের সহায়তা নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবছরই কোকাকোলা ৪০ লাখ মার্কিন ডলার গবেষণায় খরচ করে। আর এসব গবেষণার বেশির ভাগেই প্রমাণের চেষ্টা থাকে, কোমল পানীয় পানে ততটা ক্ষতি নেই।