বাংলাদেশি মনে করে ভারতীয় নারীকে নির্যাতন

বাংলাদেশি নাগরিক মনে করে এক ভারতীয় গৃহবধূর ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁর বাগদা থানার রণঘাট বর্ডার আউট পোস্ট (বিওপি) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় বাগদা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ঘটনায় আহত গৃহবধূ জোৎস্না সাঁতরা হেলেঞ্চার স্বামী।
আহত জোৎস্না এনটিভি অনলাইনকে জানান, গতকাল বুধবার দুপুরে স্থানীয় রণঘাট কুলিয়ানি এলাকার বাসিন্দা বাজারে ওষুধ কিনতে যান তিনি। বাড়ি ফেরার সময় বিএসএফের নারী জওয়ানরা ওই তাঁকে বাংলাদেশি মনে করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন। এমনকি জোৎস্নার কথা বিশ্বাস না হওয়ায় স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতপ্রধানের নাম জিজ্ঞেস করা হয় তাঁর কাছে। কিন্তু তিনি গ্রাম পঞ্চায়েতপ্রধানের নাম বলতে পারেননি জোৎস্না। ফলে তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ধরে নিয়ে শুরু হয় নির্যাতন।
জোৎস্না সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, তাঁর কাছে ভারতীয় প্রমাণপত্রের ফটোকপি থাকার পরও প্রকাশ্য রাস্তায় তাঁকে মারধর করেন বিএসএফ সদস্যরা। এরপর তিনি কবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছেন তা জানতে তাঁকে স্থানীয় বিএসএফ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নারী বিএসএফের জওয়ানরা জোৎস্না সাঁতরার পুরো শরীর তল্লাশি করেন এবং আরেক দফা মারধর করেন। এতে তাঁর বাম চোখ গুরুতরভাবে জখম হয় বলেও জানান জ্যোৎস্না।
এদিকে জোৎস্নাকে আটকের খবর পেয়ে স্থানীয়রা বিএসএফ ক্যাম্প থেকে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে এসে প্রথমে বাগদা হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে সেখানে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে।
বনগাঁ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জোৎস্না এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার কাছে ভারতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও বিএসএফের নারী জওয়ানরা আমাকে ব্যাপক মারধর করেন। আমার স্বামী পেশায় একজন দিনমজুর। সেদিন আমি পেটের ব্যথার ওষুধ কিনতে বাজারে গিয়েছিলাম।’
এদিকে এ বিষয়ে জানতে বিএসএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি। ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশি হলেই কি এভাবে মারধর করতে হবে?
এই প্রসঙ্গে কলকাতার সর্বভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার সম্পাদক সুশান্ত সরকার বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় এই ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। ভাষাগত নানা কারণে বিএসএফের সঙ্গে বোঝাপড়ায় সমস্যা হওয়াতে এই ধরনের ঘটনা মূলত ঘটে। তবে বাংলাদেশি বলে একজন নারীকে এভাবে মারধরের ঘটনা অবশ্যই ন্যক্কারজনক। আমরা ফেলানী হত্যায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তার সঙ্গে বিএসএফের এমন অমানবিক ঘটনার কথাও উল্লেখ করব।’