সোলেইমানিকে হত্যায় ভূগর্ভস্থ গোপন ঘরে বৈঠক করেন ট্রাম্প!

মার্কিন গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই ইরানি জেনারেল কাসেম সোলেইমানির পিছু নিয়ে আসছিল। বাগে পেয়েও কয়েকবার সোলেইমানিকে হত্যা করা থেকে বিরত থেকেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন। তবে সেটা বাগদাদে গতকাল শুক্রবার ভোরের আগ পর্যন্ত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল সোলেইমানির মৃত্যু নিশ্চিত করে মার্কিন সেনাবাহিনী।
ক্ষমতা বিবেচনায় ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পরই ছিল কাসেম সোলেইমানির অবস্থান। প্রতিপক্ষের এত বড় একজন সামরিক নেতাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প কতটা গোপনীয়তা রক্ষা করেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সামরিক খাত নিয়ে কর্মরত রয়টার্সের চারজন সাংবাদিকের তথ্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। নাম না প্রকাশের শর্তে মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সেখানে বলা হয়, গত সপ্তাহে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ হামলা নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেন ট্রাম্প। এর মধ্যে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে নিজের মার-আ-লাগো রিসোর্টে অবসর যাপনকালে জাতীয় নিরাপত্তায় উচ্চপদস্থদের নিয়ে একটি গোপন বৈঠক করেন ট্রাম্প।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রিসোর্টটিতে ভূগর্ভস্থ একটি কক্ষ রয়েছে। জানালাবিহীন ওই কক্ষে বসেই বাগদাদে হামলার মতো গোপনীয় বিষয়ে উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
ইরানি জেনারেলের ওপর হামলার সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে রিসোর্ট মার-আ-লাগোয় ওই বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও-ব্রায়ান ও জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ জেনারেল মার্ক মিল্লিকে ডাকেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
৬২ বছর বয়সী ইরানি জেনারেলকে হত্যার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইরাক, সিরিয়া ও লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন জায়গায় যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক ও সামরিক লোকজনের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিলেন সোলেইমানি। তবে হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন নিয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানায়নি মার্কিন প্রশাসন।
হোয়াইট হাউস বলেছে, গতকাল শুক্রবার ভোরে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরে নামলে জেনারেল সোলেইমানির ওপর হামলা করা হয়। সম্প্রতি সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন বিমান হামলায় ২৫ হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহতের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়। নিহত হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের জানাজায় শরিক হয়ে বাগদাদের মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধরা।
মার্কিন প্রশাসনের সাবেক এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, কয়েকদিন আগে ইরানের মদদপুষ্ট মিলিশিয়া গোষ্ঠী কাতায়েব হিজবুল্লাহ ইরাকের উত্তরাঞ্চলে মার্কিন এক ঠিকাদারকে হত্যা করে। এরপর থেকে সোলেইমানি উদ্ধত্যপূর্ণ অতিআত্মবিশ্বাস দেখিয়ে আসছিলেন। মূলত মার্কিন ঠিকাদারকে হত্যার জবাবে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তাতে ২৫ যোদ্ধার প্রাণহানি ঘটে।
মার্কিন সাবেক কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি (সোলেইমানি) নিজেই তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আমাদের সুযোগ তৈরি করে দেন।’