রুশ বন্দিদের গুলি করার ভিডিও প্রকাশিত, ‘অবিলম্বে তদন্তের’ প্রতিশ্রুতি ইউক্রেনের

হাঁটু গেড়ে বসে আছেন কয়েকজন; যাঁদের দেখে মনে হচ্ছে রুশ বন্দি। আর, বন্দিদের সামনে রয়েছেন কয়েকজন; ধারণা করা হচ্ছে তাঁরা ইউক্রেনীয় সেনা। একপর্যায়ে চলে বন্দিদের ওপর গুলি। গত শনিবার যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে এমন চিত্র দেখা যায়। খবর সিএনএনের।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে—প্রকাশিত ওই ভিডিও ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলে একটি অভিযান চলাকালীন বন্দিদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা বলে জানা গেছে।
প্রায় ছয় মিনিট দীর্ঘ ওই ভিডিওতে ইউক্রেনীয় সেনাদের বলতে শোনা যায়—তাঁরা রাশিয়ার সীমান্ত থেকে মোটামুটি ২০ মাইল দূরে খারকিভের ওলখোভকা অঞ্চলে সক্রিয় একটি রুশ দলকে আটক করেছে।
ভিডিওটির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ওলেকসি আরেস্তোভিচ গতকাল রোববার ইউটিউবে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘সরকার বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। অবিলম্বে এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে। আমরা ইউরোপীয় সেনাবাহিনী। আমরা আমাদের বন্দিদের নিয়ে উপহাস করি না। যদি এ ঘটনা সত্য হয়, তাহলে তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য আচরণ।’
অপর এক আলাদা ব্রিফিংয়ে আরেস্তোভিচ বলেন, ‘ব্যক্তিগত আবেগের জায়গা যাই হোক না কেন, আমরা বন্দিদের সঙ্গে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী আচরণ করি।’
সিএনএন জানিয়েছে, ভিডিওর বিষয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি জালুঝনির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়েছে। ওই বিবৃতিতে সরাসরি ভিডিও ঘটনার উল্লেখ না থাকলেও বলা হয়েছে, ‘ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে শত্রুরা (রুশ বাহিনী) কথিত ইউক্রেনীয় সৈন্যদের হাতে কথিত রুশ বন্দিদের অমানবিক আচরণের শিকার হচ্ছে—এমন ভিডিও বানিয়ে ছড়িয়ে দিয়েছে।
ভ্যালেরি জালুঝনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী এবং অন্যান্য বৈধ সামরিক বাহিনীর সবাই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের বিধিগুলো কঠোরভাবে মেনে চলে।’
এ ছাড়া জালুঝনি যুদ্ধের তথ্যগত ও মনস্তাত্ত্বিক বাস্তবতা বিবেচনা করে শুধু সরকারি সূত্রের ওপর নির্ভর করতে অনুরোধ জানান।
তবে, সিএনএন বলছে—ভিডিওতে ইউক্রেনীয় সামরিক ইউনিটের সস্পৃক্ততার ব্যাপারটি অস্পষ্ট। কারণ, ভিডিওতে সেনারা ইউক্রেনীয় ও রুশ ভাষার মিশ্রণে ইউক্রেনীয় উচ্চারণে কথা বলতে শোনা গেছে।
খারকিভের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনী যুদ্ধে জয়লাভ করার পরে ভিডিওটি প্রকাশ হয়েছে। এদিকে, গত শনিবার টেলিগ্রামে প্রকাশিত একটি ভিডিও কোন অঞ্চলের তা জানতে সক্ষম হয়েছে সিএনএন। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ভিডিওতে ইউক্রেনীয় সেনাদলের আজভ ব্যাটালিয়নের সৈন্যদের একটি সফল অভিযান তুলে ধরা হয়েছে। সে সময় ইউক্রেন বাহিনী রুশ বাহিনীর বেশ কয়েকজনকে বন্দি করে। ‘ওলখোভখা’ বা ‘ভিলখিভকা’ অঞ্চলে ওই অভিযানটি হয়েছিল।
ভিডিওতে কিছু বন্দিকে নগ্ন ও চোখ বাঁধা অবস্থায় দেখা গেছে। ভিডিওটি পোস্ট করেছিলেন খারকিভের কনস্ট্যান্টিন নেমিচেভ নামের একজন আঞ্চলিক কর্মকর্তা। তিনি ওলখোভকার ওই আক্রমণে অংশ নিয়েছিলেন।
তবে, নেমিচেভ সিএনএনকে জানিয়েছেন—ইউক্রেনীয় সেনাদের রুশ বন্দিদের হাঁটু গেড়ে বসানোর ওই ফুটেজের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
রোববার নেমিচেভ সিএনএনকে আরও বলেন, ‘এটি আমাদের এলাকার ঘটনা নয়… আমি এমন কোনো এলাকা আমাদের এদিকে দেখিনি।’
নেমিচেভ জানান, ভিডিওটি ‘হয়তো খারকিভের অন্য কোনো অঞ্চলে ধারণ করা হয়েছে।’
এদিকে ভিডিওটির বিষয়ে রুশ কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় রুশ ফেডারেশনের তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান এ আই বাস্ত্রিকিন বলেছেন, ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীরা বন্দি সৈন্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের বিষয়টি প্রমাণের জন্য তদন্ত করা হবে।

এক বিবৃতিতে, বাস্ত্রিকিন বলেন, ‘ইন্টারনেটে যে ফুটেজ প্রকাশ হয়েছে, তাতে বন্দিদের সঙ্গে ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীদের চরম নিষ্ঠুর আচরণ করতে দেখা গেছে। অনলাইনে ঘুরতে থাকা ভিডিওতে দেখা গেছে, বন্দি সৈন্যদের দুপায়ে গুলি করা হয়েছে এবং তাদের কোনো চিকিৎসা সহায়তাও দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া খবর পাওয়া গেছে, খারকিভ অঞ্চলে ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীদের কোনো একটি ঘাঁটিতে ওই অবৈধ ঘটনাগুলো ঘটেছে।’
সঙ্গত কারণে সিএনএন ভিডিওটি প্রকাশ করেনি বলে জানিয়েছে।