তালেবানের সঙ্গে কাজ করাকে এখনও ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ মনে করে চীন

তালেবান গত আগস্টে যখন আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসে তার আগে থেকেই দেশটির অর্থনীতির ৭৫ শতাংশই ছিল বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। গোষ্ঠীটি ক্ষমতায় আসার পর পশ্চিমা দেশগুলো তাদের দেশে থাকা আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার আটকে দিয়েছে। ফলে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন ও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ার ভয়ে কেউ আগ বাড়িয়ে দেশটিকে অর্থসহায়তা করছে না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে সন্ত্রাসী হামলা এবং অর্থনৈতিকভাবে ধুঁকতে থাকা দেশটিতে ভূমিকম্পে এক হাজার মানুষ নিহত হওয়ার পর সময়মতো উদ্ধার ও মানবিক সহায়তা না পাওয়ায় ভয়াবহ পরিস্থিতি পার করেছে দেশটির সাধারণ জনগণ। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববাসীর কাছে সহায়তা কামনা করছে তালেবান। সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এ খবর জানিয়েছে।
এ অবস্থায় তালেবান সরকারের সঙ্গে পূর্ণমাত্রায় নয়, বরং আধা-সরকারি (সেমি অফিশিয়াল) সম্পর্ক স্থাপন এবং আটকে দেওয়া তহবিল ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে চীন। কিন্তু, দেশদুটির মধ্যে সম্পর্কের ভবিষ্যত অনিশ্চিত রয়ে গেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন—আফগানিস্তানের অস্থিরতার কারণে এ সম্পর্ক স্থিতিশীল ও লাভজনক হবে কি না সে সম্পর্কে বেইজিং এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। কারণ এখনও তারা আফগানিস্তানকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করে।
একই কথার পুররাবৃত্তি করেছেন চীনের গানসু প্রদেশের লানঝো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর আফগানিস্তান স্টাডিজের অধ্যাপক ঝু ইয়ংবিয়াও। তিনি বলেন, ‘চীনের মূল্যায়নে এটি (সম্পর্ক স্থাপন) ঝুঁকিপূর্ণ।’ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমি এটা বলতে চাই—চীন বুঝতে পেরেছে এখানে বড় রকমের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়েছে।’

ইয়ংবিয়াও আরও বলেন, তালেবান ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে কি না এবং আফগানিস্তানের আইনানুগ সরকার হিসেবে তারা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করতে পারবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত। সেইসঙ্গে দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতিও নড়বড়ে। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির অবকাঠামো খাতে চীনা কোম্পানিগুলো বিনিয়োগে অনীহা দেখাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের আলোচিত প্রদেশ জিনজিংয়ের সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্ত রয়েছে। যেখানকার বাসিন্দা উইঘুর মুসলিমদের ওপর গণহত্যা ও নির্যাতন এবং প্রায় ১৫ লাখ উইঘুরকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বন্দি রাখার জোরালো অভিযোগ রয়েছে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে। নির্যাতিত এসব মুসলিমদের অনেকেই নিজেদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। চীনের শঙ্কা রয়েছে যে তালেবান পায়ের নিচের মাটি কিছুটা করতে করতে পারলেই এদের সহায়তা করতে পারে, যা দেশটির নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ।
গত জুলাইতে তালেবান যখন আফগানিস্তান দখল করে চলেছে তখন তালেবান প্রতিনিধি দলের চীন সফরে যায়। সেসময় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছিলেন, তালেবানকে অবশ্যই সন্ত্রাসীদের সহায়তা বন্ধ করতে হবে। তিনি বিশেষ করে উইঘুরদের সংগঠন ‘ইস্ট তুর্কেস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট’ কে চীনের জন্য সরসরি হুমকি বর্ণনা করে গোষ্ঠীটিকে যেকোন ধরনের সহায়তা না দিতে তালেবানের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। গত সোমবারও তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপে এর পুনরাবৃত্তি করেন তিনি।
আফগানিস্তান ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘বিরুনি ইনস্টিটিউট’ এর গবেষক ফাতিমা আইরান বলেন, চীন আফগানিস্তানে কয়েকটি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু, তালেবান শাসনামলে তারা বিনিয়োগে অনীহা প্রকাশ করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তাহীনতার কারণে আফগানিস্তানের বাজার যথেষ্ট স্থিতিশীল নয়। চীন তাই এখানে বড় আকারের বিনিয়োগ করে ঝুঁকি নেবে না।’