ইউয়ানকে শক্তিশালী করার চেষ্টা চীনের

চীনের মুদ্রা ইউয়ানের আন্তর্জাতিকীকরণ একটি কঠিন ও ধীর প্রক্রিয়ায় হয়েছে। বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় সমন্বয় করার জন্য দেশটি তার মুদ্রার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক পদক্ষেপ নিয়েছে। কেউ কেউ একে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক আর্থিক আধিপত্যকে টেক্কা দিতে ডলারের বিকল্প মুদ্রা করার চেষ্টা হিসেবে দেখেছেন। বস্তুত এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির মুদ্রা হিসেবে ইউয়ানের মানের একটি স্বাভাবিক বিবর্তন।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বশেষ পরিকল্পনা হলো চীন রেনমিনবি তারল্য প্রদান করবে ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস-এ, যাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও ব্যাংক বলা হয়। ব্যাংকে রিজার্ভ তহবিল তৈরি করতে চীন ন্যূনতম ১৫ বিলিয়ন ইউয়ান জমা রাখবে।
অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক একই পরিমাণ ইউয়ান বা তার সমতুল্য মার্কিন ডলার তহবিলে জমা করবে। এর লক্ষ্য হল বাজারের চাপ আর আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর অর্থনীতিকে রক্ষা করা। এসব দেশগুলো কেবল তাদের জমাকৃত অর্থ উত্তোলনই করতে পারবে না, জমাকৃত রিজার্ভ তহবিল থেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত তহবিলও পেতে পারে।
এখন পর্যন্ত সেই তহবিল এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং ও চিলির কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো প্রাথমিকভাবে তহবিলে অংশগ্রহণ করবে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর এই তালিকা আরও বড় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাইরে চিলি হলো দক্ষিণ আমেরিকায় চীনের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, যেখানে বেইজিং বাণিজ্য ও কূটনীতি উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
চীন এরই মধ্যে ৪০টিরও বেশি দেশের সঙ্গে তিন ট্রিলিয়ন মূল্যের দ্বিপক্ষীয় মুদ্রার বিনিময় স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ৪০০ বিলিয়ন ইউয়ান, ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ৩৫০ বিলিয়ন ইউয়ান, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ৩০০ বিলিয়ন ইউয়ান এবং রাশিয়ার সঙ্গে ১৫০ বিলিয়ন ইউয়ান।
ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস-এ নতুন তারল্য সুবিধা দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক ও বহুপক্ষীয় সংযোজন। বড় সুবিধা হলো আর্থিক নৈরাজ্য ও বাণিজ্যিক অস্থিতিশীলতা মোকাবিলায় বিমার সুযোগ রয়েছে।
উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির বাজারব্যবস্থায় ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক ধস চীনের পরিকল্পনাকে আরও জরুরি ও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।