লোহার বড়িতে হাইড্রোজেন সংরক্ষণ

জার্মানির ড্রেসডেনের আম্বারটেক কোম্পানি লোহার বড়ি তৈরি করেছে, যা হাইড্রোজেন সংরক্ষণ করতে পারে। সবুজ হাইড্রোজেনকে ভবিষ্যতের গ্যাস হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা পুরো শিল্পখাতকে কার্বনমুক্ত করতে পারে।
হাইড্রোজেন সংরক্ষণ এবং পরিবহনের নতুন এক উপায় বের করেছে আম্বারটেক কোম্পানি। কন্টেইনারগুলো লোহার বড়ি দিয়ে ভরা হয়। গরম বাষ্প হাইড্রোজেনকে লোহার সঙ্গে আটকে রাখে। পরে যখন বড়িতে মরিচা পড়ে তখন হাইড্রোজেন নির্গত হয়। সহজ ভাষায়: মরিচা থেকে হাইড্রোজেন তৈরি হয়।
আম্বারটেক কোম্পানির সিটিও উভে পাল জানান, ‘‘আমরা মূলত আয়রন অক্সাইড ও আয়রনের মধ্যে একটা বদ্ধ চক্র পরিচালনা করছি। উৎপাদনস্থলে হাইড্রোজেন আয়রন অক্সাইড কমায়, আর ব্যবহারের স্থানে আবার হাইড্রোজেন নির্গত হয়।’’
বড়ি পরিবহন করা সহজ। তাই যেসব কোম্পানি হাইড্রোজেন গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত নয় তাদের জন্য এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হতে পারে। কিন্তু হাইড্রোজেন বিষয়ে জার্মানির অবস্থান কোথায়? পরিবহন এবং সংরক্ষণ সেখানে কীভাবে কাজ করে?
আমদানি করা জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে হাইড্রোজেন ব্যবহার বাড়াতে চায় জার্মানি। হাইড্রোজেন গ্যাস বা তরল আকারে সংরক্ষণ এবং পরিবহন করা যেতে পারে। উচ্চ-চাপের ট্যাংকে হাইড্রোজেন পরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ এবং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। এক্ষেত্রে লোহার বড়ি সিস্টেমটির স্পষ্ট সুবিধা রয়েছে। সেন্টার ফর ফুয়েল সেল টেকনোলজিক অধ্যাপক ড. হ্যারি হস্টার মনে করছেন, এটি জ্বালানি সংরক্ষণের খুব আকর্ষণীয় সমাধান হয়ে উঠতে পারে।
পাইপলাইন, জাহাজ, ট্রেন কিংবা ট্রাক দিয়ে হাইড্রোজেন পরিবহন করা যেতে পারে। তবে পাইপলাইন ব্যবহারের সম্ভাবনা বেশি, কেননা বিদ্যমান গ্যাস লাইনগুলোকে রূপান্তর করা যেতে পারে।
২০৩২ সালের মধ্যে জার্মানির হাইড্রোজেন গ্রিড প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ নতুনভাবে তৈরি করতে হবে। আনুমানিক খরচ হতে পারে প্রায় ২০ বিলিয়ন ইউরো। এই মাপের প্রকল্প বাস্তবায়নে কয়েক দশক লাগতে পারে।
অধ্যাপক ড. হস্টার বলেন, ‘‘আমি এটা বলতে সংশয়ে থাকবো যে, আমরা সব জায়গায় হাইড্রোজেন ব্যবহার করতে পারব এবং বাসাবাড়িতেও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রতিস্থাপন করতে পারব। আপনার হয়ত মনে আছে, স্মার্ট মিটার এবং ফাইবার-অপটিক ইন্টারনেটের ব্যবহার চালু হতে অনেক সময় লেগেছে।’’
বেশিরভাগ ক্রেতার কাছে সবুজ হাইড্রোজেন এখনও অনেক ব্যয়বহুল। বিশেষজ্ঞরা আপাতত কম টেকসই হাইড্রোজেন ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন, যেন আমরা অন্তত অবকাঠামো তৈরি করতে পারি। তবে রূপান্তর যে চলছে সে বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী এই কোম্পানি।
উভে পাল বলেন, ‘‘আসলে কোম্পানিগুলোকে এই বাজারের জন্য প্রস্তুত হওয়া শুরু করতে হবে। এরইমধ্যে অনেক কোম্পানি তাদের বার্নারগুলোকে- ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবেই- হাইড্রোজেন সিস্টেমে রূপান্তর করতে শুরু করেছে।’’
আর সৌরবিদ্যুতের মতোই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাইড্রোজেনের উৎপাদন খরচ কমবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।