পেট্রোলিয়াম জেলি আসলে কী?

শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। আমাদের ত্বক শুকিয়ে যায় দ্রুত। খসখসে হয়। ত্বকের সুরক্ষায় আমরা ব্যবহার করি পেট্রোলিয়াম জেলি। কিন্তু কী এই পেট্রোলিয়াম জেলি?
পেট্রোলিয়াম জেলি হলো হাইড্রোকার্বন। আর হাইড্রোকার্বন হলো হাইড্রোজেন ও কার্বনের যৌগ বা অণু। আমরা যে মিথেন গ্যাস জ্বালাই, সেটি হাইড্রোকার্বন। গাড়িতে যে পেট্রল, অকটেন ইত্যাদি ব্যবহৃত হয় সেগুলোও হাইড্রোকার্বন। খাবারের তেল এমনকি মোমও হাইড্রোকার্বন। তাহলে মিথেন গ্যাসীয়, অকটেন তরল এবং মোম কঠিন কেন? —সহজ কথায়, এই ভৌত অবস্থা নির্ভর করে হাইড্রোকার্বন অণুর কার্বন সংখ্যার ওপর। মিথেনে একটি কার্বন থাকে। অকটেনে থাকে আটটি কার্বন। পেট্রোলিয়াম জেলিতে বিভিন্ন ধরনের হাইড্রোকার্বন অণু থাকে। সেগুলোতে কার্বন সংখ্যা প্রায় পঁচিশ বা তারও অধিক।
কার্বন সংখ্যা বেড়ে গেলে অণুর আণবিক ভর বাড়ে। অণু আকারে বড় হয়। ভৌত ধর্মে ভিন্নতা দেখা যায়। তাই মিথেন সাধারণ তাপমাত্রায় গ্যাস কিন্তু মোম হলো কঠিন। মিথেন যত সহজে জ্বলে (দাহ্য), মোম তত সহজে জ্বলে না।
হাইড্রোকার্বন অণুগুলোর একটি বিশেষ ধর্ম হলো, এগুলো পানির সঙ্গে মেশে না। পানির অণুর সঙ্গে কোনো প্রকার আকর্ষণ বল কাজ করে না। বিজ্ঞানে একে বলা হয় হাইড্রোফোবিসিটি বা জলানিরাসক্তি। সে জন্যই পানিতে তেল দ্রবীভূত হয় না। ত্বকে, পেট্রোলিয়াম জেলি একটি আবরণের মতো কাজ করে। ত্বকের কোষে যে পানি থাকে, তা বাষ্পীভূত হতে পারে না। ফলে ত্বক শুষ্ক হয় না। বিভিন্ন উদ্ভিদেও হাইড্রোকার্বনের এমন আবরণ দেখা যায়। কচুপাতা যে পানিতে ভিজে না, তার কারণ সেটাই।
একসময় পেট্রোলিয়াম জেলি সহজলভ্য ছিল না। মানুষ ত্বকের যত্নে তেল ব্যবহার করত। বাংলাদেশে নারিকেল ও সরিষার তেল একসময় বহুল প্রচলিত ছিল। সীমিত পরিসরে এখনো তেল ব্যবহৃত হয়। তবে আধুনিক নাগরিক জীবনে মানুষ এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সুগন্ধি পেট্রোলিয়াম জেলিই ব্যবহার করেন।
লেখক: গবেষক, স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়, সুইডেন