টানা দ্বিতীয়বার দেশসেরা বৈজ্ঞানিক জার্নালের স্বীকৃতি পেল জাভার

টানা দ্বিতীয়বারের মতো দেশসেরা বৈজ্ঞানিক জার্নাল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে জার্নাল অব অ্যাডভান্সড ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল রিসার্চ (জাভার)। ওয়েব অব সায়েন্সের বিচারে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ও স্কোপাস-এর ক্ষেত্রে একমাত্র বাংলাদেশী কিউ২ (Q2) জার্নাল হওয়ায় শীর্ষে স্থান পেয়েছে জার্নালটি।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) জাভারের প্রধান সম্পাদক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এইচ এম নাজমুল হুসাইন নাজির ইউএনবিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
জাভারের সম্পাদকীয় বোর্ডে বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত, মালয়েশিয়া, মিসর, জর্ডান ও নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের গবেষকরা রয়েছেন।
অধ্যাপক নাজমুল বলেন, জার্নালটির সম্পাদনায় লেখক ও রিভিউয়ার পরস্পরের পরিচয় গোপন রাখা হয় বা ডাবল-ব্লাইন্ড পিয়ার রিভিউ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যা একটি আন্তর্জাতিক মানের জার্নালের জন্য আবশ্যক। জাভার বর্তমানে স্কোপাস, ওয়েব অব সায়েন্স (ইএসসিআই), পাবমেড সেন্ট্রাল, ডিওএজে, আগরিস, ক্যাবিআই ও বাংলা জেএওএল-এ সূচিকৃত। ২০২৪ সালের সূচক অনুযায়ী, স্কোপাস সাইটস্কোর- ২.৭, এসজেআর (এসসিআইইমাগো জার্নাল র্যাঙ্ক)- ০.৩৯৮, এইচ-ইনডেক্স- ২৪। এসব সূচক আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে জাভারের অবস্থানকে অত্যন্ত সম্মানজনক করে তুলেছে।
জাভারের যাত্রা শুরু সম্পর্কে অধ্যাপক নাজমুল বলেন, ২০১৪ সালের মার্চে যাত্রা শুরু করে জাভার। বাকৃবির কয়েকজন শিক্ষক-গবেষকের নেতৃত্বে এবং নেটওয়ার্ক ফর দ্য ভেটেরিনারিয়ানস অব বাংলাদেশের (বিডিভেটনেট) উদ্যোগে প্রকাশিত হয় এর প্রথম সংখ্যা। শুরু থেকেই প্রতি বছর চারটি সংখ্যা প্রকাশ করা হচ্ছে, যাতে গড়ে ১২০-১৩০টি গবেষণাপত্র স্থান পায়।
একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালের মান, গ্রহণযোগ্যতা ও বৈশ্বিক প্রভাব পরিমাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হলো ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর। জাভারের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর সম্পর্কে এই অধ্যাপক বলেন, জাভারের বর্তমান ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ১.৫, যা ২০২৩ ও ২০২৪ উভয় বছরেই বজায় ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩০০টির বেশি বৈজ্ঞানিক জার্নাল থাকলেও মাত্র ৬টি ওয়েব অব সায়েন্সে তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে জাভারের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর সর্বোচ্চ।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বৈজ্ঞানিক ডেটাবেস স্কোপাসে জাভারের অবস্থান সম্পর্কে অধ্যাপক নাজমুল বলেন, স্কোপাস, এলসেভিয়ার-এর তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের মাত্র ১৩টি জার্নাল স্কোপাসে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে জাভার একমাত্র কিউ২ (কোয়ারটাইল ২) র্যাংক অর্জন করেছে এবং টানা দ্বিতীয় বছর সেই অবস্থান ধরে রেখেছে। এ ছাড়া স্কোপাস ভেটেরিনারি (সাধারণ) ক্যাটাগরিতে বিশ্বব্যাপী ২০০টি জার্নালের মধ্যে জাভারের অবস্থান ৫৮তম।
ড. নাজমুল বলেন, ‘বিজ্ঞান একক প্রচেষ্টায় বিকশিত হয় না। এতে প্রয়োজন সম্মিলিত চিন্তা, মানসম্পন্ন রিভিউ, নৈতিক গবেষণা এবং সমাজের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিকতা। সে কারণেই আমরা বলি, উন্নত বিজ্ঞানের জন্য চলুন একসঙ্গে কাজ করি।’
জাভারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা জাভারকে আরও শক্তিশালী আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে উন্নীত করতে চাই। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য এসসিআই/এসসিআইই ইনডেক্সিং এবং বৈশ্বিক গবেষকদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করা। এই স্বীকৃতি শুধু আমাদের নয়, পুরো বাংলাদেশের গবেষণা অঙ্গনের গর্ব। দেশীয় জার্নাল থেকে গবেষণার যাত্রা শুরু করে আমরা আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে পারি—এটা তারই প্রমাণ।’
জাভারের এই অর্জন শুধু একটি জার্নালের সাফল্য নয় বরং এটি বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিক গবেষণার সক্ষমতা, স্বপ্ন ও ভবিষ্যতের পথচলার দিকনির্দেশনা। এটি তরুণ গবেষকদের জন্য এক অনুপ্রেরণা, যারা নিজেদের গবেষণা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে চায়।
এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিক প্রকাশনার অগ্রযাত্রা আরও বেগবান হবে এবং বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণে জাভার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক নাজমুল হুসাইন নাজির।