আর কত সময় দরকার বাংলাদেশের?

ব্যর্থতাকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে চলায় সফলতা যেন অধরাই এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটে। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর একটা সোনালী সময় পার করেছে বাংলাদেশ। সিনিয়র খেলোয়াড়দের বিদায়ে সেই দলটা আবার মুষড়ে পড়েছে। হারের পর অজুহাত আর সামনে ভালো করার আশার বাণী শুনতে হয়েছে সমর্থকদের। কিন্তু সেই ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে যেন আর বের হতে পারছে না বাংলাদেশের দল।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) পাল্লেকেলেতে তৃতীয় ওয়ানডে হারার পর বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ বলেন, ‘আমাদের দল এখনও তরুণ। কিছু খেলোয়াড় নতুন এসেছে। অবশ্যই আমরা সবসময় ইতিবাচক জিনিসটা ভাবি। আমাদের সময় দরকার। যদি তাদের সুযোগ দেন, একদিন হয়তো তারা ভালো করবে।’
ওয়ানডেতে নাজমুল হোসেন শান্তর অভিষেক ২০১৮ সালে, মিরাজের ২০১৭ সালে, মুস্তাফিজুর রহমান ও লিটন দাসের ২০১৫ সালে। তাসকিন আহমেদের শুরুটা ২০১৪ তে। প্রত্যেকেই দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত। তারা কি আর অভিজ্ঞ হবেন না? নাকি প্রতি ম্যাচের পরই ভালো খেলার স্বপ্ন দেখিয়ে পরের ম্যাচেই আবার ব্যর্থতার বৃত্তে ঢুকে যাবেন?
তরুণদের নিয়ে গড়া এই দলটার নতুন অধিনায়ক মিরাজ। নতুন খেলোয়াড়রা যারা এসেছেন শ্রীলঙ্কা সিরিজে, তারা ব্যাটে-বলে মন্দ করেননি। সিরিজে ব্যাট হাতে তিন ম্যাচ মিলিয়ে শতরানের ওপর করেছে মাত্র ৩ জন। পারভেজ ইমনের ব্যাট থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ১০৮ রান, তাওহীদ হৃদয় ১০৩ রান, জাকের আলীর ১০২ রান। অথচ এই সিরিজ দিয়েই অভিষেক হয়েছে ইমনের, বাকি দুজনেরও ২০২৩ সালের আগে কেউ আসেননি।
বল হাতে অভিষেক সিরিজেই অর্থোডক্স বোলার তানভীর ইসলাম পেলেন দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭ উইকেট পেলেন। যে একটি ম্যাচ জিতেছে সেটিতে বাংলাদেশের জয়টা এসেছে তার ৫ উইকেটের সুবাদেই।
অথচ তরুণদের এই দলের সিনিয়র খেলোয়াড় যারা আছেন মিরাজ, শান্ত, লিটন ও মুস্তাফিজের পারফরম্যান্সটা এই সিরিজে হতাশায় ডুবিয়েছে বাংলাদেশকে। মুস্তাফিজ ৩ ম্যাচে পেয়েছেন ১ উইকেট। শান্ত তিন ম্যাচে মিলে করলেন ৩৭ রান। পাল্লেকেলের পুরোনো অভিজ্ঞতার কারণে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে টাইগাররা যার ওপর সবচেয়ে বেশি ভরসা করেছে, সেই শান্ত ফিরেছেন শূন্য রানে।
মিরাজ বল হাতে ৩ ম্যাচে ৩ উইকেটের সঙ্গে ব্যাট হাতে করেছেন ৩৭ রান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর লিটনকে দলে আনা হয় অভিজ্ঞ হিসেবে। কিন্তু তিনি তার পুরানো ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ফিরলেন শূন্য রানে। প্রেমাদাসায় প্রথম ওয়ানডেতে মাঠে নামার আগের ৭ ওয়ানডের সবগুলোতেই রান ছিল ১০ এর নিচে, যার মধ্যে তিনটিতে ফিরেছিলেন শূন্য রানে।
ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ জানিয়েছিলেন দুই সিনিয়র খেলোয়াড় মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জায়গায় অভিজ্ঞ হিসেবে তিনি ও লিটন এসে দায়িত্ব নিয়ে সংগ্রহটা বড় করতে চান। অথচ পরদিনই প্রেমাদাসায় প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাটিং বিপর্যয়ের লম্বা লাইনে এই দুজন ফিরেছেন শূন্য রানে। তাদের অভিজ্ঞতা আর দায়িত্বশীলতার দেখা মেলেনি সেখানে, বরং সহজ ম্যাচটা ভরাডুবিতে ফেলেছেন তারা।
সিনিয়রদের মধ্যে একজনের পারফরম্যান্সই ছিল চোখে লাগার মতো। চোট থেকে ফিরে এসে তাসকিন আহমেদ ছিলেন যথেষ্ট ছন্দে। যে দুই ম্যাচে নেমেছেন সেই দুটিতেই দলের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি, পেয়েছেন মোট ৬ উইকেট।
ভারতের সাবেক বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি বলেছিলেন, ‘ব্যর্থতার মুখোমুখি হও। ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ ব্যর্থতা তোমার মুখোমুখি হতে ভয় পায়।’ বাংলদেশের ক্রিকেট যেন ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না, টানা ৭ ম্যাচ জয়হীন থাকার পর এক ম্যাচে ফিরে এসে আবার পরেরটায় দেখিয়ে দিল সফলতা তদের জন্য কতটা ক্ষণস্থায়ী! প্রশ্ন থেকে যায়, সফলতার মুখোমুখি হতে তারা কি ভয় পান নাকি ব্যর্থতাকে নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছেন?