রুদ্ধশ্বাস জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ

ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন লঙ্কান ব্যাটার জেনিথ লিয়ানাগে। একের পর এক বাউন্ডারিতে বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন যেন আছড়ে ফেলছিলেন মাঠের বাইরে। তাকে ফিরিয়ে মুস্তাফিজুর রহমান আশার আলো দেখান। তা বাস্তবায়ন করেন তানজিম সাকিব। শেষ ব্যাটার দুশমন্ত চামিরার স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলে বাংলাদেশকে এনে দেন দুরন্ত এক জয়। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আজ শনিবার (৫ জুলাই) তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয়টিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতেছে ১৬ রানে। সিরিজ এখন ১-১ সমতায়।
টসে জিতে আগে ব্যাট করে ৪৫.৫ ওভারে ১০ উইকেটে ২৪৮ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে ৪৮.৫ ওভারে শ্রীলঙ্কা অলআউট হয় ২৩২ রানে।
বাংলাদেশের দেওয়া আড়াইশ ছুঁই ছুঁই লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি শ্রীলঙ্কার। স্বাগতিক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কাকে লেগবিফোর করেন তানজিম সাকিব। নিশাঙ্কার রান তখন ৫, শ্রীলঙ্কার ৬। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় লঙ্কানরা। নিশান মাদুশকা ও কুশল মেন্ডিস জমা করেন ৬৯ রান। মাদুশকাকে তাওহিদ হৃদয়ের ক্যাচ বানিয়ে জুটি ভাঙেন তানভীর ইসলাম। ৫৬ রান করে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা মেন্ডিসকে লেগবিফোর করেন তানভীর।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেছেন তানভীর। তুলে নিয়েছেন প্রথম ফাইফার। এই স্পিনারের ঘূর্ণিতে একে পরাস্ত হয়েছেন কামিন্দু মেন্ডিস, দুনিথ ভেল্লালাগে ও মাহিশ থিকসানা। তানভীর ঘূর্ণির পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে লঙ্কানরা।
এক প্রান্ত আগলে রেখে লিয়ানাগে চোখ রাঙান বাংলাদেশকে। নবম উইকেটে চামিরাকে নিয়ে ৫৩ বলে ৫৮ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। মুস্তাফিজ এসে রক্ষা করেন দলকে। স্লো ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত হয়ে তার হাতে ফিরতি ক্যাচ তুলে দেন লিয়ানাগে, সঙ্গে ম্যাচটাও। ম্যাচে মুস্তাফিজের এটি একমাত্র উইকেট। পরিস্থিতি বিবেচনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটিই নিয়েছেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ৮৫ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৮ রান করেন লিয়ানাগে।
বাংলাদেশের পক্ষে ৩৯ রানে তানভীর ৫ উইকেট শিকার করেন। তানজিম সাকিব নেন দুটি। মুস্তাফিজ, মিরাজ ও শামীম হোসেন পান একটি করে উইকেট।
এর আগে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশি ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম অবশ্য টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। ৭ রান করে আসিথা ফার্নান্দোর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন কুশল মেন্ডিসের হাতে।
১০ রানে প্রথম উইকেট হারালেও নিজেদের সামলে নেয় বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে লঙ্কানদের চেপে ধরার চেষ্টা করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও পারভেজ হোসেন ইমন। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৪ বলে ৬৩ রানের জুটি গড়েন তারা। ১৯ বলে ১৪ রান করে চারিথ আসালাঙ্কার বলে মাহিশ থিকসানার ক্যাচে পরিণত হন শান্ত।
৬৯ বলে ৬৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন পারভেজ হোসেন ইমন। শ্রীলঙ্কার জন্য হুমকি হয়ে ওঠা ইমনকে বোল্ড করেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙা। প্রথম ম্যাচের মতো আজও হাসেনি অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাট। ৯ রান করে দুশমন্ত চামিরার বলে পাথুম নিশাঙ্কাকে ক্যাচ দেন মিরাজ। ১২৬ রানে বাংলাদেশ হারায় চতুর্থ উইকেট।
তাওহিদ হৃদয় ও শামীম হোসেন পাটোয়ারি মিলে হাল ধরার চেষ্টা করেন। ২২ রান করে শামীম ফিরলেও ইমনের পর অর্ধশতক তোলেন হৃদয়। তানজিম সাকিবের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হওয়ার আগে হৃদয়ের ব্যাট থেকে আসে ৬৯ বলে ৫১ রান। ৪০ বলে ২৪ রান করে আসিথা ফার্নান্দোর বলে লেগবিফোর হন জাকের আলী।
শেষ দিকে বাংলাদেশকে টেনে নিয়েছেন তানজিম সাকিব। ২১ বলে সমান দুটি করে চার ও ছক্কায় ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার পক্ষে ফার্নান্দো চারটি ও হাসারাঙা নেন তিন উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৪৫.৫ ওভারে ২৪৮/১০ (৬৭, তামিম ৭, শান্ত ১৪, হৃদয় ৫১, মিরাজ ৯, শামীম ২২, জাকের ২৪, সাকিব ৩৩* হাসান ০, তানভীর ৪, মুস্তাফিজ ০; ফার্নান্দো ৯-০-৩৫-৪, থিকসানা ৭-০-৩২-০, চামিরা ৭-০-৩৭-১, আসালাঙ্কা ৩-০-২৪-১, ভেল্লালাগে ৮-০-৩২-০, হাসারাঙা ৯.৫-১-৬০-৩, কামিন্দু ২-০-১৯-০)
শ্রীলঙ্কা : ৪৮.৫ ওভারে ২৩২/১০ (মাদুশকা ১৭, পাথুম ৫, কুশল মেন্ডিস ৫৬, কামিন্দু ৩৩, আসালাঙ্কা ৬, লিয়ানাগে ৭৮, ভেল্লালাগে ১, হাসারাঙা ১৩, থিকসানা ২, দুশমন্ত ১৩, আসিথা ফার্নান্দো ৩; হাসান ৭-০-৪৩-০, সাকিব ৪.৫-০-৩৪-২, তানভীর ১০-২-৩৯-৫, মুস্তাফিজ ৮-০-৫৬-১, ১০-০-৩৭-১, ৯-১-২২-১)
ফলাফল : বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী।
সিরিজ : ১-১ সমতা।