দক্ষিণ আফ্রিকার ‘আশা’ বাভুমা

লর্ডসে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কঠিন এক লড়াই শেষে দীর্ঘদিনের শিরোপা খরা কাটিয়েছে প্রোটিয়ারা। এই জয়ের পরিসংখ্যানে হয়তো খুব বড় করে টেম্বা বাভুমার নাম দেখা যাবে না। কিন্তু সবখানেই জড়িয়ে বাভুমার নাম।
দীর্ঘ দিনের শিরোপা খরা চলছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। বারবার সেমিফাইনাল আর ফাইনালের জুজু কাটাতে পারছিল না প্রোটিয়ারা। নামের মতোই তাদের জন্য আশা হয়ে এলেন টেম্বা বাভুমা। ‘টেম্বা’ যার অর্থ 'আশা'। সেই আশাতেই হয়তো অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অপরাজিত দক্ষিণ আফ্রিকা।
সেঞ্চুরি করে হয়তো এই জয়ের মহানায়ক এইডেন মার্করাম। কিন্তু কোনো অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিলেন না বাভুমা। তৃতীয় উইকেটে এই দুজন মিলেই গড়েছিলেন ১৪৭ রানের জুটি। বাভুমা নিজেও খেলেছিলেন ৬৭ রানের ইনিংস। তার ইনিংসটি দেখে হয়তো সাদামাটাই মনে হবে। কিন্তু আপনি যদি তখন টেলিভিশন স্ক্রিণে চোখ রাখতেন তাহলে এর গুরুত্ব বুঝতেন।
ইনিংসের প্রায় শুরু থেকেই পায়ে ব্যাথা অনুভব করছিলেন বাভুমা। পুরো সময় জুড়েই খুড়িয়ে খুড়িয়ে দৌঁড়াতে দেখা যায় তাকে। টেস্ট ক্রিকেটে সাধারণত এভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে খেলা বেশ কঠিন। কারণ লম্বা সময় ধরে ব্যাট করতে হয় ব্যাটারদের। তবুও আশার প্রতীক বাভুমা সঙ্গ দিয়ে গেছেন মার্করামকে। দুজনে মিলে গড়েছেন জয়ের ভীত।
ক্রিকেট দুনিয়ায় ট্রলের শিকার খেলোয়াড়দের তালিকায় বাভুমার নামটা উপরের দিকেই থাকবে। কিন্তু সেই ট্রলটা যত না পারফরম্যান্সের জন্য, তার চেয়ে বেশি তার উচ্চতা কিংবা অন্য কারণের জন্য। সেই বাভুমার অধিনায়কত্বই এবার দক্ষিণ আফ্রিকা এমন এক উচ্চতায় গেলো, যেই উচ্চতায় এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো অধিনায়ক নিয়ে যেতে পারেননি। প্রথমবার প্রোটিয়াদের এনে দিলেন বৈশ্বিক শিরোপা। একটা বিশ্বকাপ।
কেইল ভেরেইন্না যখন উইনিং শট খেললেন তখন ড্রেসিংরুমে থাকা সবাই উল্লাসে ফেটে পড়েন। কিন্তু নিচের দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে চেপে ধরে কি যেনো একটা ভাবছিলেন বাভুমা। হয়তো মনে পড়ছিল তার দাদির কথা, যিনি তার নাম ‘টেম্বা’ রেখেছিলেন। হয়তো ভাবছিলেন ট্রলের শিকার হওয়া দিনগুলোর কথা, হয়তো তখন দুহাত দিয়ে ঢেকে রাখছিলেন আনন্দাশ্রু, হয়তো কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন সৃষ্টিকর্তাকে কিংবা মনে করছিলেন অন্য কোনো বিশেষ কথা।
ম্যাচ শেষে বাভুমাকে সেই কৃতিত্বও দিয়েছে মাঠে আসা দর্শকরা। পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মেডেল দেওয়ার সময় যখন টেম্বার নাম উচ্চারিত হয়, তখন সবচেয়ে বেশি চিয়ার বাভুমার বেলাতেই আসে!
এমন অর্জনের পরে হয়তো বাভুমাকে হৃদয়ের মণি কোঠায় রাখবে দীর্ঘদিন। প্রথম শিরোপাজয়ী অধিনায়ক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবেন আজীবন।