শুরুতেই নেই মেসি-নেইমার

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের পথপরিক্রমা অনেক দীর্ঘ। ফুটবলের সেরা আসরের টিকিট পাওয়ার লক্ষ্যে প্রায় দুই বছর ধরে একে-অন্যের মুখোমুখি হতে হয় দক্ষিণ আমেরিকার ১০টি দলকে। লাতিন আমেরিকার ফুটবল মানেই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। আর ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় তারকা নেইমার ও লিওনেল মেসি। অথচ বাছাইপর্বের শুরুতে দুজনের কেউ নেই! নিষেধাজ্ঞার কারণে চিলির মাঠে নেইমারকে পাচ্ছে না ব্রাজিল। অন্যদিকে ইকুয়েডরের বিপক্ষে মেসি খেলতে পারবেন না চোটের কারণে। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকালে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিশ্বকাপ-মিশন তাই শুরু হচ্ছে দুই মহাতারকাকে ছাড়াই।
গত বছর ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭ গোল খাওয়ার লজ্জা সহজে ভুলতে পারবে না ব্রাজিল। বিশ্বকাপশেষে লুইস ফেলিপে স্কলারির বিদায় এবং দুঙ্গার দ্বিতীয় দফা কোচের দায়িত্বে আগমন অবশ্য ‘সেলেসাও’দের আশার আলো দেখিয়েছিল। তবে টানা ১০ ম্যাচ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে শুরু করলেও কোপা আমেরিকায় হতাশ হতে হয়েছে ব্রাজিলকে। গ্রুপ পর্বে কলম্বিয়ার কাছে হেরে যাওয়ার পর অখেলোয়াড়সুলভ আচরণের কারণে চার ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হন নেইমার। অধিনায়ককে ছাড়া ব্রাজিলও বেশিদূর যেতে পারেনি, কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে হেরে যায় প্যারাগুয়ের কাছে।
একে তো নেইমার নেই, তার ওপরে বাছাইপর্বের শুরুতেই প্রতিপক্ষ কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন চিলি। সান্তিয়াগোর মাঠে ব্রাজিলের তাই অস্বস্তিতে থাকার কথা। যদিও চিলির বিপক্ষে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সাফল্যের পাল্লা অনেক ভারী। এর আগে ৭০টি মুখোমুখি লড়াইয়ের ৫০টিতেই ব্রাজিল জিতেছে, হেরেছে ৭টি, বাকি ১৩ ম্যাচ ড্র। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে চিলির কাছে মাত্র একবারই হেরেছে ব্রাজিল, ২০০০ সালে ৩-০ সালে। তবে এরপর দুই দলের ১৪টি লড়াইয়ের ১২টিতেই বিজয়ীর নাম ব্রাজিল। অন্য দুই ম্যাচে জয়-পরাজয়ের নিষ্পত্তি হয়নি।
চিলির বিপক্ষে এমন দুর্দান্ত সাফল্য অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে কাকাকে। ফিলিপ্পে কোতিনিয়োর চোটের কারণে শেষ মুহূর্তে দলে সুযোগ পাওয়া সাবেক ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার ইতিহাস থেকে প্রেরণা নিয়ে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন, ‘প্রত্যেক খেলারই নিজস্ব ইতিহাস আছে। সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে তার পরিবর্তনও হয়। তবে এটা ঠিক যে আমরা সবসময়ই চিলির বিপক্ষে ভালো খেলেছি। এটা আমাদের বাড়তি সুবিধা দেবেই।’
গত বিশ্বকাপে টাইব্রেকারে কোনোরকমে জেতার পর গত মার্চে এক প্রীতি ম্যাচে চিলিকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল ব্রাজিল। আগামী বিশ্বকাপের ছাড়পত্রের পথে প্রথম ধাপেও সাফল্য পেতে উদগ্রীব দাভিদ লুইজ, ‘চিলির বিপক্ষে যে কোনো ম্যাচই কঠিন। তবে এবারো আমরা জয় পেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
বিশ্বকাপ আর কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলের পারফরম্যান্স হতাশাজনক হলেও আর্জেন্টিনার যথেষ্ট ভালো ছিল। যদিও দুটো প্রতিযোগিতাই আর্জেন্টাইনরা শেষ করেছে হতাশা নিয়ে, ফাইনালে হেরে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব তাই ‘আলবিসেলেস্তে’র জন্য হতাশা ঘোচানোরও মিশন। কিন্তু শুরুতেই যে মেসি নেই। গত মাসে স্প্যানিশ লা লিগার একটি ম্যাচে বাঁ হাঁটুতে চোট পাওয়ায় প্রায় দুই মাসের জন্য মাঠের বাইরে চলে গেছেন চারবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার। মেসির অনুপস্থিতিতে ঘরের মাঠে আর্জেন্টিনাকে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন হাভিয়ের মাসচেরানো। দলের সবচেয়ে বড় তারকার অনুপস্থিতি সম্পর্কে মেসির এই বার্সেলোনা সতীর্থর অভিমত, ‘মেসি থাকলে তো সবসময়ই ভালো।
তবে এই ম্যাচে আমরা তাকে পাচ্ছি না। আমাদের এটাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে আর এর থেকে কোনো অজুহাত খোঁজা চলবে না।’