ভালুকায় পাঁচ তারকা হোটেলসহ বেস্ট হোল্ডিংসের কয়েকটি মেগা প্রকল্প

ময়মনসিংহের ভালুকায় ম্যারিয়ট ভালুকা নামে একটি পাঁচ তারকা হোটেলসহ পুঁজিবাজারের তালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠান বেস্ট হোল্ডিংস পিএলসির বেশ কয়েকটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। ভালুকায় তৈরি পোশাক, ওষুধসহ বিভিন্ন খাতের আড়াই হাজারের বেশি শিল্পকারখানাকে টার্গেট করেই এইসব প্রকল্প প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
ইতোমধ্যে প্রকল্পগুলোর মধ্যে বোর্ডিং স্কুল হেইলিবেরি ভালুকা গত আগস্টে ২০২৪ সেশনের ক্লাস শুরু করেছে। বেস্ট হোল্ডিংসের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আইকনএক্স লিমিটেডের মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে স্কুলটি। সম্পূর্ণ আবাসিক পরিবেশে এখন ষষ্ঠ থেকে নবম গ্রেড পর্যন্ত দ্বিতীয় ব্যাচের ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে ১২তম গ্রেড পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু হবে। প্রায় ১৬০ বছর আগে যুক্তরাজ্যে এই স্কুলটির যাত্রা শুরু হয়। আগামী বছর জুনের মধ্যে পাঁচতারা হোটেল ম্যারিয়ট ভালুকা চালু করতে যাচ্ছে বেস্ট হোল্ডিংসের আরেকটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আইকনএক্স হোটেল লিমিটেড। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তরে ভালুকা উপজেলার মাওনা হবিরবাড়িতে এই হোটেল তৈরির মাধ্যমে দেশের শিল্প ও আতিথেয়তা খাতে নতুন দৃশ্যপট যোগ করবে।
আগামী বছরের (২০২৬ সাল) জুনে হোটেল ম্যারিয়ট ভালুকা চালু হচ্ছে জানিয়ে আজ শনিবার (১৬ আগস্ট) হেইলিবেরি স্কুলের অডিটোরিয়ামে কথা বলার সময় বেস্ট হোল্ডিংস কোম্পানির সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, ম্যারিয়ট ভালুকা হোটেলটি শিল্পখাত ও পাঁচ তারকা সেবার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করবে। এখানে শুধু অতিথিদের থাকার ব্যবস্থেই থাকছে না, পাশাপাশি দেশের নতুন শিল্পাঞ্চলগুলোয় ব্যবসা-বাণিজ্য আরও এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করা হবে। এলাকাটিকে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এখানে পণ্য সরবরাহকারীদের এক্সপো, বাণিজ্য সম্মেলন ও শিল্পসংশ্লিষ্ট সভার আয়োজন করা হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি অতিথিরা অংশ নিচ্ছেন। প্রায় চার দশমিক ৪৭ একর জমির ওপর হোটেলটি তৈরি হচ্ছে। দেশে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। তাদেরকে বিলাসবহুল আবাসন সেবা দেওয়ার কথা মাথায় রেখে এই হোটেলের পরিকল্পনা করা হয়েছে। হোটেলটিতে থাকবে ২২৮টি রুম। অতিথিদের চাহিদা মেটাতে থাকবে আধুনিক সুবিধা। এসব সুবিধার মধ্যে আছে উচ্চ-গতির ইন্টারনেট, স্মার্ট ওয়ার্ক স্টেশন, বড় পরিসরে মিটিং হল, এক্সিকিউটিভ লাউঞ্জ, রেস্তোরাঁ, ব্যবসাকেন্দ্র, বিনোদন স্থান, স্পা ও ফিটনেস পরিষেবা।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, অতিথিদের সুন্দর পরিবেশে নির্ঝঞ্জাট রাখাটাই আমাদের লক্ষ্য, হোটেলের সুবিধাগুলো অতিথিদের চাহিদার ওপর নির্ভর করে সাজানো হয়েছে। এখানে এক বা একাধিক দিনের জন্য বাণিজ্যিক বৈঠক বা অন্যান্য অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা থাকবে। এই প্রকল্প আমাদের পরিবর্তিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে তুলে ধরছে। ব্যবসা এখন আর ঢাকাকেন্দ্রিক নয়। বিনিয়োগকারীরা ভালুকার মতো উদীয়মান শিল্পাঞ্চলে আসছেন। তাদের জন্য আমাদের অবশ্যই অবকাঠামো নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। ভালুকায় হোটেল করার সিদ্ধান্তটি কৌশলগত ও প্রতীকী। এটি এই এলাকাকে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। হোটেলটি ঢাকার বাইরে উন্নয়ন ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করবে। এটিকে দেশজুড়ে প্রবৃদ্ধির অংশ হিসেবে দেখছি। হোটেলটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এছাড়া হোটেল লা মেরিডিয়ান ঢাকা সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে বেস্ট হোল্ডিংসের ব্যবস্থাপনাতেই। বেস্ট হোল্ডিংস ২০২১ সালের জুনে ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে চুক্তি করে। হোটেলের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখন এর অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জাসহ বাকি কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ম্যারিয়ট ভালুকার কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, শপিংমল, সিনেপ্লেক্স, ফুডকোর্টের কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
হোটেলটির পরিষেবা, খাদ্য ও পানীয়, প্রশাসন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে পাঁচশ’র বেশি মানুষের কাজের সুযোগ হবে জানিয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, পরোক্ষভাবে লজিস্টিক, ক্যাটারিং ও পরিবহন খাতে স্থানীয়দের কাজের সুযোগ করবে। এছাড়া বেস্ট হোল্ডিংসের মালিকানায় ভালুকাতে ৫৩ একর জায়গার ওপর লাক্সারি ইন্টারন্যাশনাল চেইন রিসোর্ট লক্সারি কালেকশন্স এন্ড ভিলার কাজ চলমান রয়েছে। মূলত উচ্চ-মধ্যবিত্ত পর্যটক, অবকাশযাপনকারী, ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করতে ১৪০টি রুম বিশিষ্ট রিসোর্টটিতে রয়েছে এক্সিকিউটিভ লাউঞ্জ, বিজনেস সেন্টার, ব্যাংকুয়েট, মিনি সুইমিংপুল, রিক্রিয়েশন সেন্টার, কিডস ক্লাব, কিডস পুল, মুভি থিয়েটার, স্পা, ফিটনেস সেন্টার, গল্ফ প্র্যাক্টিস, টেনিস/ভলিবল কোর্টসহ অত্যাধুনিক সব সুবিধা। এছাড়া রিসোর্টটির অধীনে ১৪টি স্টুডিও ভিলা, চারটি প্রেসিডেন্সিয়াল ভিলা, দুটি লাক্সারি বাংলো, একটি ক্লাব হাউজ, একটি রেস্টিং প্যাভিলিয়ন, একটি সিগনেচার রেস্টুরেন্ট, একটি স্পেশাল রেস্টুরেন্টসহ থাকছে অত্যাধুনিক সব ফ্যাসিলিটি।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনালের লাক্সারি সেগমেন্টের অন্যতম এই রিসোর্টটি। রিসোর্টির পরিষেবা, খাদ্য ও পানীয়, প্রশাসন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে সাড়ে চারশ’র বেশি মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি হবে। প্রকল্পগুলো পুরোদমে চালু হলে ঐ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বেস্ট হোল্ডিংস।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, গত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের (জুলাই-জুন) তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদনে বেস্ট হোল্ডিংসের সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ১৪ পয়সা। আগের অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) একই সময়ে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ৩৫ পয়সা। গত অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ২৫ পয়সা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-মার্চ) শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল এক টাকা ৯ পয়সা। কোম্পানিটির তিন প্রান্তিকে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছে এক টাকা ১২ পয়সা। আগের অর্থবছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ ছিল এক টাকা ৩৯ পয়সা। গত ৩১ মার্চ কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৫৩ টাকা ৫১ পয়সা।
গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির অডিটেড পিই রেশিও দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৯১ পয়েন্টে। পিই রেশিও অনুসারে কোম্পানিতে বিনিয়োগ নিরাপদে রয়েছে। পুঁজিবাজারের কোনো কোম্পানির পিই রেশিও যদি সিঙ্গেল ডিজিটে থাকে, তাহলে সেখানে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ নিরাপদ ধরে নেওয়া হয়। এছাড়া পিই রেশিও ডিজিট যদি ১৫ পয়েন্ট পর্যন্ত অবস্থান করে, তবে সেখানেও বিনিয়োগ নিরাপদ বলে ধরা হয়ে থাকে। তবে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসাবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। সেই হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। অর্থাৎ পিই রেশিও ৪০ এর ওপরে গেলে বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। পিই রেশিও যত বাড়বে ঝুঁকির মাত্রা তত বাড়তে থাকবে।
২০২৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় বেস্ট হোল্ডিং। ‘এ’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন এক হাজার ৫৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। শেয়ার সংখ্যা ১০৫ কোটি ৯২ লাখ ৩০ হাজার ৩৬৫টি। রিজার্ভে রয়েছে চার হাজার ৬৩৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৬৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২০ দশমিক ২২ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর দাঁড়ায় ১৫ টাকা ৬০ পয়সা।