ঈদ মোবারক
ঈদ এবং কিছু কথা

এখন মা-বাবা থেকে অনেক দূরে। বিস্তর পথ। যমুনা সেতু। রাস্তার ক্লান্তি। তাই ওপথে যাওয়ার সাহস পাইনি। যাঁরা কর্মজীবন ছেড়ে আত্মীয়দের কাছে যেতে পেরেছেন, তাঁদের জন্য ঈদ অনেক আনন্দের। হাজার কষ্টের পরও ঈদ তাঁদের জীবনে খানিকটা সময় ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দেয়।
ক্লান্তহীন ঈদ আসে উচ্চবিত্তদের ঘরে। শপিং করতে দেশের বাইরে যান। ঈদের আনন্দ ভোগ করতে ছুটে চলেন দেশ হতে দেশান্তরে। যাঁরা লোকাল বাসে-ট্রাকে, গাদাগাদি করে ট্রেনে-লঞ্চে করে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যান, তাঁরা হয়তো কিছুটা স্বাদ পান। কয়েক দিন ধরে সেই হাড়ভাঙা পরিশ্রম করা মানুষগুলো বাড়ি যাচ্ছেন। অনেকে হয়তো আজ ঈদের দিনও বাড়িতে যাচ্ছেন। একটুখানি হাসির আশায়, একটু প্রাণকে জিরিয়ে নেওয়ার ভরসায়।
রংপুরের পীরগঞ্জে ট্রাক উল্টে যে পোশাক শ্রমিকরা মারা গেলেন, তাঁদের পরিবারে হয়তো আর কখনই ঈদ করা হবে না। এমন গরিবদের জন্য ঈদ কখনই আনন্দ নিয়ে আসে না; বরং হাজার গুণ কান্না তাঁদের চিরদিনের সাথি হয়ে রয়।
ঢাকার ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলো ঠিক আগের মতোই আজকে ঘুম থেকে উঠেছেন। গাড়ির হর্ন শুনে সকাল হয়েছে তাঁদের। ছেঁড়া জামা আর নোংরা কাপড় আজও তাঁদের শরীরে। ঈদ নিয়ে তাঁদের কোনো ভাবনা নেই, কোনো বাড়তি চিন্তা নেই। তাঁরা শুধু বোঝেন, খেয়ে-না খেয়ে ঘুমিয়ে থাকা।
সবার মতো পাহাড়ের মানুষের ঈদও আনন্দের বার্তা নিয়ে আসত। কিন্তু তা তাঁদের কপালে জোটেনি। হাওরের ফসলহারা, বাড়িহারা মানুষগুলোর ঈদও একই।
ঈদকে যদি ভ্রাতৃত্বের বন্ধন বলি, তাহলে সেটা ধর্মের বাইরে সব মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। টানা এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ আমাদের হয়তো সেটাই শেখায়। কিন্তু আমরা কজন সেই শিক্ষা নিতে পারি।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুরের আহমেদপুর শরকিয়া এলাকায় গতকাল প্রায় ২০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশ আগ্রাসনে শেষ। তাঁদের জন্য ঈদ নতুন কোনো শব্দ নয়। প্রতিদিনের মতোই একটা দিন আসবে তাঁদের মাঝে। প্রতিদিনের মতো খেয়ে-না খেয়ে পার হবে দিনটি।
মানুষকে মানুষ হিসেবে বিচার করতে না শিখলে আমরা হয়তো সঠিক শিক্ষা পাব না। ঈদকে আনন্দদায়ক করতে হলে দরকার সাম্য, যা কোনো ধর্মের একক শিক্ষা নয়।
তাই সব মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক এবারের ঈদ। সবাইকে ঈদ মোবারক।
লেখক : সাংবাদিক