অফলাইন রাইড: স্বস্তির আশায় ঝুঁকির যাত্রা

দেশজুড়ে ডিজিটাল রাইড-শেয়ারিং সার্ভিস যেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, তেমনি এর বাইরে এক ধরনের ‘অফলাইন রাইড’ ব্যবস্থাও বাড়ছে নীরবে। এই ব্যবস্থায় যাত্রী ও চালক সরাসরি কথাবার্তার মাধ্যমে যাত্রা ঠিক করেন-কোনো অ্যাপ, ট্র্যাকিং বা ডিজিটাল লেনদেন ছাড়াই। প্রথম দেখায় সহজ ও কম খরচের বিকল্প মনে হলেও, এই অফলাইন রাইডেই লুকিয়ে রয়েছে একাধিক নিরাপত্তাহীনতা, আইনি জটিলতা এবং প্রতারণার আশঙ্কা।
ট্র্যাকিং নেই, সহায়তার সুযোগও নেই
অনলাইন রাইড-শেয়ারিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা—ডিজিটাল ট্র্যাকিং। যাত্রা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সময়, রুট, চালকের তথ্য—সবই অ্যাপে সংরক্ষিত থাকে। বিপরীতে অফলাইন রাইডে এসব তথ্যের কোনো রেকর্ড না থাকায় যাত্রী নিখোঁজ, দুর্ঘটনা বা সহিংসতার মতো ঘটনার ক্ষেত্রে দ্রুত সহায়তা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষেও তদন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
ইনস্যুরেন্সের আওতার বাইরে
অনলাইন রাইড-সেবাগুলো সাধারণত বিমার আওতায় থাকে, যেখানে চালক ও যাত্রী উভয়ের দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু অফলাইনে এসব সুবিধা থাকে না, ফলে দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির দায় কেউ নেয় না।
আইনের চোখে অবৈধ
পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, রাইড-শেয়ারিং সেবা পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট অ্যাপ ও লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ অফলাইন রাইডগুলোর বেশিরভাগেরই নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র বা নিবন্ধন। তাই এ ধরনের রাইড ব্যবহারকারীরাও আইন অমান্যের দায়ে পড়তে পারেন—যার জেরে আইনগত ঝামেলায় জড়ানোর ঝুঁকিও রয়েছে।
ভাড়ায় অনিয়ম, বাড়ে প্রতারণা
অ্যাপভিত্তিক সেবায় ভাড়া নির্ধারিত ও স্বচ্ছ হলেও অফলাইন পদ্ধতিতে এমন কোনো মানদণ্ড নেই। চালক চাইলে ইচ্ছেমতো ভাড়া দাবি করতে পারেন, যা প্রায়শই যাত্রীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও প্রতারণার জন্ম দেয়। অনেক সময় এটি তর্কাতর্কি, এমনকি সহিংসতায়ও গড়ায়।
বিশেষজ্ঞদের সুস্পষ্ট পরামর্শ
পরিবহন বিশ্লেষক ও আইনজীবীরা একবাক্যে বলছেন—নিরাপদ যাতায়াতের জন্য রাইড-শেয়ারিংয়ের বৈধ ও ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করা উচিত। কারণ ডিজিটাল রেকর্ড থাকা মানেই জরুরি প্রয়োজনে সহায়তা পাওয়া সহজ এবং নিরাপত্তাও অধিক নিশ্চিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বল্প ভাড়ার প্রলোভন বা সহজ লেনদেনের জন্য যারা অফলাইন রাইড নিচ্ছেন, তারা নিজের অজান্তেই একটি ঝুঁকিপূর্ণ খেলায় অংশ নিচ্ছেন।
করণীয়
সচেতনতার বিকল্প নেই, নগর জীবনে নিরাপদ যাতায়াতের জন্য সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের উচিত—বৈধ রাইড-শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করা, চালক ও গাড়ির তথ্য যাচাই করা, যাত্রার শুরু ও শেষের রেকর্ড রাখা, অফলাইন রাইড এড়িয়ে চলা।
তথ্যপ্রযুক্তির যুগে যাত্রার স্বস্তি শুধু ভাড়ায় নয়, নিরাপত্তা ও বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর নির্ভর করে। অফলাইন রাইড হয়তো সাময়িকভাবে সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু সেটিই হতে পারে জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত। দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে নিজের নিরাপত্তার জন্য ডিজিটাল, বৈধ ও সুরক্ষিত মাধ্যম বেছে নেওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।