বৃষ্টিভেজা দিনে সন্তানের সঙ্গে ফিরে চলুন শৈশবে

এক সময় বর্ষা মানেই ছিল খোলা মাঠে ছুটে বেড়ানো, নর্দমায় মাছ ধরা, আর কাগজের নৌকা ভাসিয়ে নির্ভেজাল আনন্দ। কিন্তু এখন সেই দিন কেবলই স্মৃতি। বহুতলের চার দেওয়ালে মোবাইল আর টিভির দুনিয়ায় বন্দী শিশুরা হারিয়ে ফেলছে প্রকৃতির ছোঁয়া। তবে ইচ্ছা আর একটু সময় দিলেই সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে পারেন সেই পুরোনো আনন্দ।
স্বতন্ত্র শিল্প
বৃষ্টিতে হুড়াহুড়ির আনন্দ থেকে বঞ্চিত এই প্রজন্মের অনেকেই। মাঠঘাট নেই। রাস্তার জমা পানি নোংরা। তাই পানিতে ভেজা শৈশবও হারাতে বসেছে। তবে একফালি বারান্দা থাকলেই উপভোগ করা যাবে বৃষ্টি। সন্তানকে বলতে পারেন পছন্দের কোনো কিছু এঁকে ফেলতে। ব্যবহার করতে বলুন স্কেচ পেন। পিজবোর্ড বা একটু মোটা কাগজে মার্কার দিয়ে লিখতে বলুন। তারপর পানির ছাট আসছে এমন স্থানে সেটি রেখে দিন। পানির ছিটেয় আঁকা ছবির রং ধেবড়ে বা ঘেঁটে গিয়ে অন্য রকম নকশা হবে। তৈরি হবে নতুন শিল্প।
হাতে-কলমে বিজ্ঞান শিক্ষা
বর্ষার মৌসুমে দ্রুত গাছপালা বেড়ে ওঠে। কীভাবে বীজ থেকে অঙ্কুর বের হয়, মাটিতে অঙ্কুরিত বীজ পুঁতলে গাছ হয়, এসব সন্তানকে শেখাতে পারেন হাতে ধরে। একটি কাচের পাত্রে ভিজে কাপড় বা ভিজে কাগজে ছোলা বা মটর বীজ ফেলে দিন। আলো-হাওয়া যুক্ত স্থানে পাত্রটি রেখে দিন। প্রত্যেক দিন তাতে কী বদল আসছে সন্তানকে নিয়ে দেখতে থাকুন। তাকে পরিবর্তনগুলো লিখে রাখতে বলুন। এভাবেই বীজ থেকে অঙ্কুর বের হতে দেখবে খুদে। ভিজে মাটিতে অঙ্কুরিত বীজ ছড়িয়ে দিন। চারা হওয়া, সেটির বেড়ে ওঠা, গাছের যত্ন ধীরে ধীরে প্রত্যক্ষ করবে সন্তান।
কাদামাটির খেলা
কাদামাটি মেখে খেলার দিন অতীত। এই প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা আকার গড়ে কৃত্রিম রঙিন মাটি দিয়ে। বাড়ি বা আবাসনে যদি একফালি উঠান থাকে, মাটি নিয়ে খেলায় উৎসাহ দিতে পারেন। ছাদ কিংবা বারান্দাকেও এই কাজে লাগাতে পারেন। বাড়ির পুরনো বাসন দিয়ে তাকে রান্নাঘর বানিয়ে দিন। মাটি দিয়ে লুচি, মিষ্টি বানাতে বলুন তাকে। কাদা হবে ঠিকই, তবে এতে সন্তান আনন্দও পাবে। শুধু মাটি নয়, গাছের পাতা, ফুল নিয়েও সন্তানকে খেলায় উৎসাহ দিতে পারেন। খেলতে খেলতেই গাছগাছালি, ফুল, ফল, পাখি চিনবে সে।
নৌকা বানিয়ে ছোট্ট ‘বিজ্ঞান’ শেখানো
কাগজের নৌকা নিয়ে খেলার দিনও হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। সন্তানকে নিয়ে ফিরতে পারেন সেই সব দিনে, যখন কাগজের নৌকা বানিয়ে পানিতে ভাসানো হতো। শুধু কাগজ নয়, পিজবোর্ড, গাছের ছাল বা টুকিটাকি জিনিসপত্র দিয়ে এমন কোনো কিছু বানিয়ে দিন, যা পানিতে ভাসতে পারে। এগুলো বানানোর সময় বিজ্ঞানের নীতি, কৌশলও খুদেকে সহজ করে বোঝানোর চেষ্টা করতে পারেন। তাকে সঙ্গে নিয়েই এমন কোনো কিছু বানাতে পারেন, যা বৃষ্টির জমা পানিতে ভাসবে।
বৃষ্টির শব্দে সুরের খেলা
বৃষ্টি ঝমঝমিয়ে পড়ুক বা ঝিরিঝিরি, তারও নিজস্ব ছন্দ এবং শব্দ থাকে। বৃষ্টির শব্দ নিয়েও খুদের সঙ্গে খেলায় নামতে পারেন। বালতিতে পানি পড়লে কেমন শব্দ হয়, টিনের পাত্রে কেমন, মাটির হাঁড়িতে পানি পড়ার শব্দের পার্থক্য কোথায় আপানার সন্তান বুঝবে নিজে থেকেই। কোনটার শব্দ কেমন, সে জানবে খেলার ছলেই।